নিউজ ডেস্কঃ
বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট চলাচল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের আয় রোজগার প্রায় শূন্যের কোঠায়। তাই কর্মীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আজ বুধবার (৬ মে) কর্মীদের পাঠানো ১ অফিস আদেশে বেতন কর্তনের বিষয়টি জানা যায় বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ এয়ারলাইন্স। বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়া উদ্দিন আহমেদের পাঠানো এ আদেশে এয়ারলাইন্সের ক্যাজুয়াল কর্মীদের মাসিক বেতন ও ভাতা ২২ দিনের হিসাব করে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আদেশে বিমানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোট বেতন (গ্রস স্যালারি)
গ্রেড অনুযায়ী ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কাটে নেওয়া হয়েছে। ককপিট ক্রুদের মধ্যে যাদের চাকরিকাল শূন্য থেকে ৫ বছর তাদের মোট বেতনের ২৫ শতাংশ, ৫ থেকে ১০ বছর ধরে কর্মরতদের ৩০ শতাংশ এবং ১০ বছরের ঊর্ধ্বে ককপিট ক্রুদের ৫০ শতাংশ বেতন কাটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।আদেশে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিমানে প্রেষণে (অন ডেপুটেশন) কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বেতন কর্তন করা হবে না। তবে ‘অন্যান্য ভাতা’ হিসেবে বিমান তাদের যে বিশেষ ভাতা প্রদান করে তার ২৫ শতাংশ কর্তন করা হবে বলে জানিয়েছেন।
এ আদেশে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ও বিস্তারের কারণে বিমানের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৮ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পর্ষদের ২৩৮তম সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।এদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিমান শ্রমিক লীগের। সংগঠনের সভাপতি মশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সরকারি কোনো দফতরে বেতন কর্তন করা হয়নি। তাহলে বিমানের শ্রমিকদের বেতন কেন কাটবে এটা আমার প্রশ্ন। তাছাড়া সরকার বিমানকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। অন্তত প্রণোদনার কথা চিন্তা করে আমাদের পূর্ণাঙ্গ বেতন দেয়া উচিৎ ছিল তাদের।
আমরা বেতন কর্তন না করার জন্য ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিমানকে চিঠি দিয়েছি। আমাদের কোনো জবাব দেয়া হয়নি এখনো পর্যন্ত। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই শ্রমিকদের বেতন কাটা হয়েছে।তিনি এসময় বলেন, বিমান আমাদের সবার প্রতিষ্ঠান। বেতন কর্তনের আগে যদি অন্তত আমাদের সঙ্গে একবার আলোচনা করতো, আমাদের কর্তনের বিষয়ে অবগত করতো তাহলে আমাদের মধ্যেও বিমানের ওনারশিপটা চলে আসতো। যদি একপেশে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে আর আমাদের মতো সংগঠনের কী দরকার ছিল? সরকার আমাদের ইউনিয়নকে অনুমোদন দিলো বা কেন?
বাংলাদেশ বিমানের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা অন্যান্য দফতর থেকে ডেপুটেশনে বিমানে এসে কাজ করছেন তাদের বেতন কর্তন করা হলো না কেন? তারাও তো বিমানের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। বরং সিইও যদি বলতেন যে তিনি নিজেও বেতন নেবেন না, তাহলে অন্যরা আরো অনুপ্রেরণা পেত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার মনে হয় মোটেও উচিত হয়নি। প্রতিমাসের ২৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে বিমানকর্মীদের বেতন হলেও ৬ মে পর্যন্ত তাদের অ্যাকাউন্টে এপ্রিল মাসের বেতন ঢোকেনি বলে জানিয়েছেন বিমান শ্রমিক লীগের এই নেতা আরো নিশ্চিত করেছেন বিমানের কর্মীরা।
এ বিষয়ে কর্মীদের এক ইমেইলের মাধ্যমে বিমানের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার ভিনিত সুদ বলেন, আগামী ১০ মে’র মধ্যে আমরা এপ্রিলের বেতন পরিশোধের চেষ্টা করছি। এদিকে সাধারণ ছুটি ও বিমানবন্দর বন্ধ থাকার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শিডিউল ফ্লাইট আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বন্ধ আছেন। তবে বিভিন্ন দেশে বিশেষ ফ্লাইট ও বিদেশে সবজি রফতানিতে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।