নিউজ ডেস্কঃ
বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আকাশে ঘনাতে থাকা মহামারি (কোভিড-১৯) কালো আঁধার এখন আরো ঘনীভূত। টানা ৫ দিন ধরে ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকা সংক্রমণ এবার বড় লাফ দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারের আগের ২৪ ঘণ্টায় চটগ্রামে এক সঙ্গেই সনাক্ত হয়েছেন ৫৯ জন করোনা রোগী। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে এদিন ৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনেরই করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিভাসু থেকে এ রিপোর্ট হাতে আসার পর মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যান চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বারবার চেক ক্রসচেক করে আজ শুক্রবার বেলা ১টা ৫ মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামে বিভাগীয় পরিচালক ,
(স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।গতকাল বৃহস্পতিবার ( ৭ মে ) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৯৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে নমুনায় করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ১৯ জনের। এছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে এদিন ৬১টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে মোট ৪০ জনের। যা চট্টগ্রামে এযাবৎ কালের রেকর্ড করোনা ভাইরাসে শনাক্ত হয়। এছাড়াও কক্সবাজারে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ১ জন করোনা রোগীর শনাক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনেই চট্টগ্রামে ৫৯ জনের করোনা সনাক্ত হলো।
ক্রমাগতই বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩ মে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডিতে ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এসব নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫ জনের। এ ছাড়া সিভাসু ল্যাবে পরীক্ষায় আরও ৮ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এনিয়ে সব মিলিয়ে এদিনে মোট ১৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয় চট্টগ্রামে।পরদিন ৪ মে বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জনই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এর পরদিন ৫ মে বিআইটিআইডি ল্যাবে আরো নতুন করে ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়।
কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে এ ২দিন কোনো ফল জানাতে পারেনি সিভাসু ল্যাব। ৬ মে সিভাসু ল্যাবের আগের ২ দিনে (৪ ও ৫ মে) পরীক্ষিত ১২২টি নমুনার ২২টি নমুনা পজিটিভ হয়। এর মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ওই রাতে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে ১৯০ টি নমুনা পরীক্ষায় আরো নতুন করে ১২ জন করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। সবমিলিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের আগের ৪ দিনেই নতুন করে শনাক্ত হয় ৫৮ জন করোনা ভাইরাসের রোগী। ৫ দিনে ৮ জনের মৃত্যুশুধু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বাড়ছে না চট্টগ্রামে। গত ৪ দিনের তথ্যগুলো যাচাই করতে গিয়ে জানা যায়,
এই দিনগুলোতে করোনা শনাক্ত ৫৮ রোগীর মধ্যে ৬ জন এখন আর বেঁচে নেই। ৩ মে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বিআইটিআইডিতে ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে যে ৫ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছিল তাদের ১ জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে বলে সেদিন জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এর পরদিন ৪ মে সকালে জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে নগরের এনায়েত বাজারে ১ প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। পরে সেদিন রাতেই বিআইটিআইডি থেকে তার কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট আসে। গত ৬ মে বুধবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসকান্দর উল্লাহ নামের ১ বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছিল।
সর্বশেষ আজ শুক্রবার ৮ মে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) যে ১৯ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে তার ২ জন এখন আর বেঁচে নেই। এছাড়া সিভাসুতে করোনা ভাইরাস শনাক্ত ৪০ জনের কতজন মারা গেছে তা এখনো নির্ণয় করা যায়নি। চট্টগ্রামে এখন সবমিলিয়ে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা, রাজবাড়ী, কুমিল্লা ও কক্সবাজারে করোনা শনাক্ত ৭ ব্যক্তিও রয়েছেন চট্টগ্রামে।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে ১ শিশুসহ মোট ১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এ ছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া গেছে। এদিকে চট্টগ্রামে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ৩২ জন। তাদের মধ্যে ৫ ছিল পুলিশ সদস্যও আছেন। বর্তমানে ১৭৭ জন করোনা রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২০৩ জন।