
নিউজ ডেস্কঃ
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির সামনে পিটিয়ে মেরে ফেলতে সমবেত হয়েছেন দুর্বৃত্তরা, লাতিন আমেরিকার দেশ হাইতির ধর্মযাজক বুরেল ফন্টিলাস। গত মার্চে প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এই যাজক নিজ প্রাণ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেছে। তবে তার এই প্রাণ হারানোর শঙ্কাটা করোনা ভাইরাসের কারণে নয়। বরং পোর্ট-অ-প্রিন্স দ্বীপের প্রতিবেশিরা তাকে পিটিয়ে মারতে বাড়ির সামনে সমবেত হওয়ায় এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বন্দুকধারী প্রতিবেশিরা তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে পিটিয়ে মারার হুমকি দিচ্ছে প্রতিবেশীরা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ৪২ বছর বয়সী এই যাজক করোনা ভাইরাসের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে। ফন্টিলাস জানান, তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য জড়ো হয়েছে। বেশ কয়েকটি গ্রুপকে তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে প্রস্তুতি নিতে দেখেছেন বলে প্রতিবেশিরাও জানিয়েছেন।তবে কারিফুর শহরে হাইতিয়ান এই যাজককে হত্যা করতে সশস্ত্র জনতার সমবেত হওয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
কারিফুর পুলিশের কমিশনার চার্লস মনাদি জানান, কর্তৃপক্ষ ফন্টিলাসের বিরুদ্ধে হুমকির বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। যেকোনও ধরনের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য তার বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাজককে পুলিশি নিরাপত্তাব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কুসংস্কারের শিকার হচ্ছেন। ফিলিপাইনের স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে ব্লিচিং দিয়ে পরিষ্কার হতে হয়। সংক্রমণের আশঙ্কায় ভারতে চিকিৎসককে বাড়ির মালিক জোর করে বের করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
লাতিন আমেরিকার দারিদ্রপীড়িত দেশ হাইতিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক কুসংস্কার বড় বাধা তৈরি করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নাগরিকদের অবিশ্বাস, দুর্নীতিতে জর্জরিত রাজনৈতিক সঙ্কট, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং গ্যাং ক্রাইম প্রচণ্ডমাত্রায় আছে দেশটিতে। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে হাইতিয়ানরা অনেক কিছু নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। ফন্টিলাস জানান, হাইতিয়ানরা এখন মনে করেন, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যে করোনায় আক্রান্ত হবে তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ হয়েছেন তিনি।
সুস্থ হয়ে উঠলেও প্রতিবেশিদের হামলার আশঙ্কায় বাড়িতে না ফিরে বর্তমানে এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। ২০১০ সালের দিকে দেশটিতে কলেরার মহামারি শুরু হওয়ার পর ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দেশটিতে কলেরায় অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং অসুস্থ হয়েছিল ৮০ হাজারের বেশি। সেই সময় হাইতির ভুদু ধর্মের অন্তত ৪৫ জন যাজককে জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। এই যাজকদের কারণে কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে অভিযোগ এনে স্থানীয়রা তাদের মেরে ফেলে ফেলেছে।
তবে করোনাভাইরাস এখনও কলেরার মতো প্রাণঘাতী হয়ে ওঠেনি লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন এই দেশে। হাইতিতে এখন পর্যন্ত ১৮২ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ জন। কিন্তু দেশটিতে সামাজিক কুসংস্কার ও হয়রানির ভয়ে অনেকেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করছেন না। কর্তৃপক্ষের কাছে করোনার রোগী শনাক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে সেই দেশে।
হাইতির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক লরে অড্রিয়েন জানান, সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। গত ২৭ এপ্রিল দেশটির প্রেসিডেন্ট জোভিনিল মোইসি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে করোনা ভাইরাসের রোগীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটলে তা সহ্য করা হবে না বলে হুশিয়ারি দেয়। তবে অনেকে হাইতিয়ান মনে করেন, কুসংস্কার ছড়ানো ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নাটের গুরুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ খুবই দুর্বল।