
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের ছাতক শিল্পনগরী উপজেলাধীন ভাতগাঁও ইউনিয়নের বরাটুকা হাসনাবাদ গ্রামে বিকলাঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়া ছাতকে একই পরিবারের ৬সদস্যদের মধ্যে ২জন পঙ্গু ও ১জন প্রতিবন্ধী আজও সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে।আবেদন নিবেদন করেও স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারের দ্বারে দ্বারে ধনা দিয়ে কোন সুরাহা পাচ্ছেন না পঙ্গুও প্রতিবন্ধী পরিবার।ভাতার জন্য আবেদন করেছে কিন্ত এখনো তারা কোন কার্ড পায়নি। যুবক বয়সে থেকেই প্রতিবন্ধী হলে ও বৃদ্ধ বয়সে কোন সাহায্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে।তারা শারিরিকভাবে চলাচল ও কথা বলতে পারছেন না। পিতা-ফুফু আপন বড় ভাই সহ ৩জন নিয়ে মানবেতর জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন।
এ পরিবারে ২জন দিলোয়ার হোসেন (২৩) ডালিম হোসেন (১৮) দিনমজুর কাজ করে সামান্য আয় দিয়ে জীবিকা চালিয়ে কষ্টসাধ্য দিন পার করছেন। সারা পৃথিবীজুড়েই মহামারিতে তেইশ ও আটারো বছরের ২জন যুবক হলেও তারা কোন কাজ কর্ম না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পিতা-ফুফু আপন বড় ভাই সহ ৩জন। দিনমজুর ঘরে প্রতিবন্ধী সন্তান যেন ’মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।প্রতিবন্ধী পিতা-ফুফু আপন বড় ভাই সহ ৩জন কে নিয়ে চরম অভাব অনটনে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। গ্রামে গঞ্জে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করে সরকার প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন করার ঐকান্তিক চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আজও অনেক প্রতিবন্ধী সরকারের প্রদেয় সুবিধা প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সাহাষ্য সহযোগিতা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি সরকারের গৃহিত সাহায্য সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হতভাগ্য প্রতিবন্ধীরা সেহরিতে মুড়ি ইফতারে পানি খেয়ে রমজান মাসে রোজা রাখছেন ৬সদস্য পরিবার। সমাজে অবহেলা আর করুণার পাত্র হয়ে সারাজীবন কাটাতে হবে তাদের মত হতভাগ্য প্রতিবন্ধীদের। পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী আজাদ মিয়া আবেছরি বেগম ও আব্দুর রহমান ভাতা থেকে বঞ্চিত জন্মে পর থেকে ভাল ছিলো যুবতী বয়সে জ্বর হয়ে আবেছরি বেগম (৫৮) তার দুই পা ও হাতের আঙ্গুল গুলো জট লাগানো। আবেছরি বেগম পঙ্গু হয়ে ঘরে।বসে আছে। বসা অবস্থায় দেখলে তাকে কেউ বলতে পারবে না পঙ্গু ও প্রতিবন্ধি। বসা থেকে অন্যস্থানে যেতে পারে না আবেছরি বেগম।
একই দশা হচ্ছে তার ছোট ভাই আজাদ মিয়া (৫৫) তার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা মানতে রাজি নন যে পঙ্গু প্রতিবন্ধী। আবেছরি মৃত ছবুতেরা বেগম মা ও বাবা মৃত মরম আলী অনেকবার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েও তাদের বিশ্বাস করাতে পারেননি তার ছেলে মেয়ে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী। উপজেলাধীন ভাতগাও ইউনিয়নের বরাটুকা হাসনাবাদ গ্রামে মৃত মরম আলীর পুত্র আজাদ মিয়া (৫০) আজাদ মিয়া তার বড় বোন আবেছরি পুঙ্গ ও প্রতিবন্ধী আছে। আজাদ মিয়া যুবক বয়সে সে বিয়ে করেছে ৪ পুত্র সন্তান জন্মে পর তার স্ত্রী তাকে ফেলে চলে গেছেন।তাদের অভিযোগ, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী হয়েও সরকারের দেয়া পঙ্গু প্রতিবন্ধী ভাতা সরকারি সহায়তা থেকে থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
যদিও জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে দাবি করা হয় যে তাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধী তথ্য সংগ্রহের কাজ করেছে। কোনো পঙ্গু ওপ্রতিবন্ধী তালিকা থেকে বাদ দিয়ে
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা । তারা মহামারি করোনায় লকডাউন হবার পর থেকে একমাত্র ভরসা হচ্ছে মুড়ি আর পানি।জানা যায়, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা থাকলেও প্রকৃত অর্থে কেউ তথ্য সংগ্রহ করতে যান নি। বরং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই মনগড়া তালিকা প্রস্তুত করে দিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী তথ্য সংগ্রহ বা তালিকা যে সরকার থেকে করা হয় এ বিষয়ে কিছু জানেন না অভিযোগকারীরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আজাদ মিয়া গ্রামে প্রতিবন্ধী তথ্য সংগ্রহ করতে বাড়ি বাড়ি কেউ যায়নি।
এ বিষয়ে আবেছরি এ প্রতিনিধিকে বলেন, “বাড়িত আইয়া পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীর লিস্ট যদি করতো, তাইলে তো আমরা বাদ পড়তো না। যদি সারা গেরামের হকল ঐ প্রতিবন্ধী হইতো, তাইলে বুঝতাম যে ভুলে হয়তো আমাদের ৬ সদস্য পরিবারে নাম বাদ পড়ছে। আমরার গেরামো আছেই মাত্র কয়েকজন প্রতিবন্ধী । এর মধ্যে এক পরিবারে ৩ জনে নাম বাদ পরে কেমনে? আজাদ মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, “চেয়ারম্যান-মেম্বার ২ জনরেই কইছি আমার পোলারে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়ার জন্যে। তারা দেইন না । কইন আমার বুলে প্রতিবন্ধী না। ৬ জনের সংসার । তার পুত্র ডালিম হোসেন দিনমজুর কাজ। কইরা যে টেকা পাইন, ইতা দিয়া সংসারই চলে না। আমরা গরিবরে তারা চোখে লাগে না।
গ্রামের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে একই পবিরারে ৩ জন প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত সকল সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করতে পারছেন না তারা। বাব বার চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে গেছিল আমার পোলা। তারা কইন এখনো নাম আইছে না। জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের তাদরকিতে ইউনিয়ন সমাজকর্মীরা এ কাজ করেন। সে তথ্য সংগ্রহের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের মে মাস থেকে প্রতিবন্ধীদের কার্ড বিতরণ করেছে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী ভাতা ৬০% বৃদ্ধি করে।গত ২০১৭ সালে ১৬ মে উপজেলার সমাজ সেবা কর্মকতা বরাবরে আজাদ মিয়া পরিবারে পক্ষে মনোহর আলী একটি লিখিত অভিযোগ পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকতা স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান বিধি মোতাবেত প্রতিবন্ধি ভাতায় অন্তভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হলে আজো তাদের নাম স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
এখবর পেয়ে গত রোববার দুপুরে পঙ্গু ও প্রতিবন্ধি পরিবারে পাশে ছাতক প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন তালুকদার অথায়নে ১৫,চালু,২কেজি পিয়াজ,২কেজি আলু,১কেজি ডাল,১কেজি চানা,১লিটার তৈল প্রদান করেন ছাতক প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রনি, যুন্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম হিরন, সাংবাদিক হাসান আহমদ, আজিজুর রহমান, জুনাইদ আহমদ রুনু। এদিকে উপজেলা ইউএনও গোলাম কবির,তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে ১০ কেজি চাউল নগদ পাচঁ টাকা দেয়া হয়।
এছাড়া আলীগঞ্জ ইসলামী সমাজকল্যান পরিষদের প্রতিষ্টাতা সভাপতি উবায়দুল হক শাহীন নগদ একহাজার টাকা ও ইউপি মেম্বার সাজুর মিয়া তাদের অবস্থা দেখে নগদ পাচঁ টাকা প্রদান করেছেন। এব্যাপারে সাজুর মিয়া জানান,পুঙ্গ ও প্রতিবন্ধি পরিবার তারস্বামর্থক।অনুয়ারি তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। প্রতিবন্ধি তালিকা সময় তারা ইউনিয়ন অফিস যায়নি। এব্যাপারে চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।