আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আবারও ওয়েবসাইটে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলের সরকার। ৩ টি রাজনৈতিক দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক অ্যালেক্সান্দ্রে ডি মোরাইস। এর পরপরই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য ফিরিয়ে আনে ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।এর আগে, গত সপ্তাহে শুধু দৈনিক করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল ব্রাজিলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে দাবি করে আর বিস্তারিত তথ্য দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিল সে দেশের সরকার।
এর পরপরই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। ব্রাজিলে করোনা সংক্রমণের তথ্য গোপন ও বিকৃত করে প্রকাশের আশঙ্কা করে বোলসোনারো সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিশ্লেষকরা।গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মোরাইস সরকারি ওয়েবসাইটে করোনা সংক্রমণের বিস্তারিত তথ্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশ দেন। এর জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। সময় শেষ হওয়ার আগেই আদালতের নির্দেশ পালন করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বে সর্বোচ্চ করোনাভাইরাস সংক্রমিক দেশের তালিকায় দুইয়ে আছেন ব্রাজিল। দেশটিতে মাসখানেক ধরে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যমতে, লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ছেন ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৯৭ জন। আক্রান্তদের মধ্য সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৮১ জন।তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে দেশটিতে আক্রান্ত-মৃতের প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে মত বিশ্লেষকদের। আর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তকেই দায়ী করছেন সমালোচকরা।
প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো এক টুইটে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান তথ্য থেকে কোনও দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি বোঝা যায় না। তবে কেন সংক্রমণের তথ্য সরিয়ে নেয়া হলো সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।এর আগে, লকডাউন তোলার বিষয়ে সমালোচনা করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বোলসোনারো।জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থাটির মতে, বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে লাতিন আমেরিকা। এর মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি ভুগছে ব্রাজিল। পাশাপাশি মেক্সিকো, পেরু, কলম্বিয়া, চিলি, বলিভিয়াতেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
এ অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস লকডাউন তোলার ক্ষেত্রে ছয়টি জরুরি মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি ছিল- সংক্রমণের হার কমে আসা। সংক্রমণ কমার আগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া বিপজ্জনক বলে জানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি লাতিন আমেরিকায় সংক্রমণ বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।ডব্লিউএইচও’র এ উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট। এসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক সংস্থা’র মতো আচরণ বন্ধ না করলে তা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বোলসোনারো।
সূত্র: বিবিসি