চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ২নং হোসনাবাদ ইউনিয়নের খীল মোগাল(রদেয়কূল) গ্রামে পান্না দত্ত নামে এক গৃহবধুকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুর ২টার দিকে তাকে জোরপূর্বক বিষপ্রয়োগ করিয়ে হত্যা করা হয় বলা এলাকাবাসী দাবি করেন।নিহত পান্না দত্ত ইউনিয়নের খীল গ্রামের সুভাষ দত্তের স্ত্রী। সুভাষ দত্ত একজন স্কুল মাষ্টার বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ‘সুভাষ দত্ত স্ত্রী পান্না দত্তের সাথে ২৫ বছর ধরে সংসার করে আসছিলেন।
বিয়ের পর থেকে পান্না দত্তকে তার শ্বাশুড়ি নিয়তি দত্ত ও স্বামী সুভাষ দত্ত বিভিন্ন সময় অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় যৌতুক ও অর্থের জন্য তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করতেন। এছাড়া তার উপর বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করা হতো বলেও তার প্রতিবেশী জানান। এরকম প্রতিকূল পরিবেশের মাঝে পান্না দত্তের ঘর আলোকিত করে এক ছেলে সন্তান আসে। তার নাম রাখা হয় শুভ দত্ত। তিনি এক বুক ভরা আশা নিয়ে ছেলেকে বড় করতে থাকে। ছেলের বয়স বর্তমানে বিশ উর্ধ্ব।
কিন্তু তিনি যে ছেলেকে নিয়ে আশায় বুক বেধেছিল সেই ছেলেও একসময় আবির্ভাব হয়ে উঠে দাজ্জাল রূপে। গত কয়েক বছর ধরে পান্না দত্তের শ্বাশুড়ি, তার স্বামী ও পেটের সন্তান এ তিনজনের অমানুষিক নির্যাতন মারাত্মকভাবে তাকে সহ্য করে আসতে হয়। নিজের সন্তান হয়ে তার স্বামী ও শ্বাশুড়ির সামনে ছেলের হাতের কিলগুঁতো, লাথি খাওয়াটা ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা এক পর্যায়ে তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়।
এদিকে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘দুপুর ২টার দিকে পান্না দত্তের শ্বাশুড়ি, তার স্বামী ও ছেলে মিলে তাকে জোরপূর্বক বিষপ্রয়োগ করানোর চেষ্টা করানোর চেষ্টা করা হলে তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে মাটিতে ছটফট করতে দেখতে পায়। পান্না দত্ত এ সময় তার পরিবারের সদস্যদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন।’তদন্তে আরো জানা যায়, দুপুর ২টার দিকে তাকে হারপিক করা হলে সে ছটফট করতে থাকে। পরে তাকে ইছামতী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। চমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক রাত ৮.৩০ মিনিটের দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার পরিবার ও এলাকাবাসীর সহায়তায় পোস্ট মর্টেম কার্যক্রম শেষ করে তার লাশটি মর্গে রাখার পর মঙ্গলবার ৭টার দিকে লাশটি এনে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন সদস্য পুষ্প সেন বলেন, ‘পান্না দত্ত ও সুভাষ দত্ত স্বামী-স্ত্রী। তাদের সংসারে প্রায় সময়ই ঝগড়া-বিবাদ ও পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। পান্না দত্ত হয়তো পারিবারিক কলহের জেরেই মৃত্যুবরণ করেন।’
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘গত রোববার পান্না দত্ত নামের এক গৃহবধূ পারিবারিক কলহের জেরে মৃত্যুবরণ করেন বলে আমাদের কাছে খবর আসে। তবে তাকে ওইদিনই চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এটাকে হত্যা বা আত্মহত্যা কিছুই বলা যাচ্ছেনা। তবে এ ঘটনার সত্যতা বের করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি টোটালি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। স্থানীয়রা হত্যাকাণ্ডে স্বামী ও তার শ্বাশুড়ির প্রতি আঙুল তুলছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।