শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও থেমে নেই কোচিং বাণিজ্য। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু শিক্ষক ও বড় ভাইয়েরা। এমনকি পুলিশ সুপারের অনুমতি নিয়ে কোচিং চালানো হচ্ছে বলে এলাকায় প্রচারণা করছেন দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা গ্রামের এক শিক্ষক সহ দর্শনা থানার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের শিক্ষক ও বড় ভাইয়েরা।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে কোচিং চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম।গত ১৫ জুন সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপসচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ স্বাক্ষরিত এক স্বাক্ষতকারে বলা হয়েছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে পূর্বের বন্ধের ধারাবাহিকতায় আগামী ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখ পর্যন্ত সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।
এ সময়ে নিজেদের এবং অন্যদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসাই অবস্থান করে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে নিজ নিজ দায়িত্বে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার দর্শনা,মেমরগর,কুড়ালগাছি ইউনিয়নের গ্রাম গুলো কুড়ালগাছি,চন্ডিপুর,প্রতাপ পুর,আমডেঙ্গা,সাদাবরি,আনন্দ বাজার,হরিৎচন্দপুর,বুইচিতলা,ফুলবাড়ি,চাকুলিয়া। আবার পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের গ্রাম গুলো পারকৃষ্ণপুর,জিরাট,নাস্তিপুর,মদনা,কামারপাড়ে, সাড়াবাড়িয়া, ছোটবলদিয়া,ছয়ঘরিয়া,বড়বলদিয়া,বাড়াবি ও ঝাজাডাঙ্গা। দামুড়হুদা উপজেলার,, হোগলডাঙ্গা, হেমায়েতপুর, নতিপোতা, কালিয়াবকরী, চারুলিয়া,
ভগিরথপুর, ছুটিপুর, গোপালপুর, কলাবাড়ি, রামনগর, ইব্রাহিমপুর, বিষ্ণুপুরসহ এবং আশপাশের আরো কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে এলাকায় পুরোদমে চলছে কোচিং বাণিজ্য।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার তাকে কোচিং চালানোর জন্য অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আশ্বস্ত করে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে উপস্থিত করাচ্ছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, একাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং চলায় বজায় থাকছে না সামাজিক দূরত্ব।
আর সামাজিক দূরত্বের কথা বাদই থাক, কোচিং জিনিসটিই তো অবৈধ। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব দেখিয়ে যাচ্ছেন । যেখানে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কোচিং বন্ধের নির্দেশ দেয় সেখানেই দলের প্রভাব চলে? আর কীভাবে তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোচিং চালায়।জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কীভাবে তারা কোচিং চালাচ্ছেন? চুরি করে কোনো কিছু করাও অপরাধ।
আর কোচিং তো অবৈধ। অবৈধ জিনিস কীভাবে টিকে থাকে তাও আবার মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে? অবিলম্বে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।কোচিং সেন্টার চালানোর বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, কাউকে কোচিং চালানোর অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার পুলিশের নেই। কোচিং চালানোর জন্য কাউকে অনুমতিও দেয়া হয়নি।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হবে। যদি কেউ দরিদ্র হয় তাহলে তাদের ত্রাণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কোচিং বন্ধ থাকবে।চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, এই সংকটময় সময়ে কোচিং সেন্টার চালানোর তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যারা কোচিং চালাচ্ছেন, সে যেই হোকনা কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।