ছাতক প্রতিনিধি::
ছাতকে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। রোববার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মৎস্য খামার। ছাতক-সিলেট সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বন্যার। প্রবল বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।
গত ২৪ ঘন্টায় এখানে ১৩০ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭৬সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।৩দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক
বন্যা প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়কের বিভিন্ন অংশ।
এতে সড়ক পথে ঝুঁকি নিয়ে কিছু কিছু যান চলাচল করলেও শনিবার রাত থেকে ছাতকে সাথে জেলা সদরসহ দেশের সকল অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ৫ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন নিরাপদ স্থানে।স্থানীয়রা জানান, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে সীমাহিন দূর্ভোগের মধ্যে দিন-রাত অতিবাহিত করছেন। ছাতক শহর, ছাতক সদর, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক,বুড়াইর গাও-আলমপুর.-দাহারগাও-আলমপুর,তাজপুর-নুরুল্লাহপুর,গোবিন্দনগর-দশঘর,পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। একাধিক স্টোন ক্রাসার মিল, পোল্ট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
শাক-সবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।এছাড়া ইসলামপুর ইউনিয়নের রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপাড়, নোয়াকোট, বৈশাকান্দি,
বাহাদুরপুর, ছৈদাবাদ, রহমতপুর, দারোগাখালীসহ অন্যান্য গ্রাম, পৌরসভার হাসপাতাল রোড, শাহজালাল আবাসিক এলাকা, শ্যামপাড়া, মোগলপাড়া তাতিকোনা,
বৌলা, লেবারপাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাহন, বাতিরকান্দি, চরভাড়া, কাড়–লগাঁও, লক্ষীভাউর, চানপুর, মানিকপুর, গোদাবাড়ী, কচুদাইড়, রংপুর,
ছাতক সদর ইউনিয়নের বড়বাড়ী, আন্ধারীগাঁও, মাছুখালী, তিররাই, মুক্তিরগাঁও, উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আলমপুর, দাহারগাও, ঘিলাছড়া,মৈশাপুর,তকিরাই,তেরাপুর
মোহনপুর, আমেরতল, ঘাটপার, গদালমহল, রুক্কা, ছোটবিহাই, এলঙ্গি, রসুলপুর, শৌলা, চরমহল্লা ইউনিয়নের ভল্লবপুর, চুনারুচর, চরচৌলাই, হাসারুচর, প্রথমাচর,
সিদ্ধারচর, চরভাড়–কা দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের দড়ারপাড়,ভুইগাও, হরিশরণ, হাতধনালী, রাউতপুর, ধনপুর, চৌকা, রামচন্দ্রপুর,
হলদিউরা কালারুকা ইউনিয়নের,নুরুল্লাহপুর,উজিরপুর, রামপুর, মালিপুর, দিঘলবন,সিকন্দরপুর, আরতানপুর, রংপুর, মুক্তিরগাঁও, ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালিয়া, ঘাঘলাজুর,
হায়দরপুর, বাদে ঝিগলী, সিংচাপইড় ইউনিয়নের পুরান সিংচাপইড়, আসলমপুর, গহরপুর, মহদী, সৈদরগাঁও, সিরাজগঞ্জ বাজার, সরিষাপাড়া, হবিপুর, মামদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম কবির জানান,
ইতোমধ্যে বন্যা দূর্গতদের আশ্রয়ের জন্য নোয়ারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাতিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়। আরো ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মেডিকেল টিম গঠনসহ সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়।