নিউজ ডেস্ক । অজানা বাংলাদেশ
আরিফুল ইসলাম সুমন | ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
বাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের কালীশিমুল গ্রাম সহ আশপাশ এলাকার শতাধিক কৃষকের পরিবারে এখন শুধুই আহাজারি। ঘরে ঘরে কৃষকের বোবা কান্না। তাদের শতাধিক একর আবাদি জমি এখন চাষাবাদের প্রায় অযোগ্য। প্রতিদিনই রাতের আঁধারে এসব জমিতে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে কৃষকের অনেক জমি এখন ক্ষত-বিক্ষত। যার কারণে এসব উর্বর জমিতে চলতি মৌসুমে চাষাবাদ অনিশ্চিত হওয়ায় একমাত্র সম্বল আগামি ফসল ঘরে আসবে না, এ চিন্তায় কৃষকের পরিবারগুলোতে চলছে মাতম।
২৮ অক্টোবর রবিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাকশিমুল ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী অসংখ্য ছোটবড় গর্তে ক্ষত-বিক্ষত জমিগুলোতে কৃষকের নানা বিলাপ। কৃষক মোঃ আলতাফ আলী বলেন, কিছুদিন যাবত রাতের আঁধারে একদল দস্যু প্রকৃতির লোক নৌপথে নৌকা নিয়ে এসে আমাদের জমির মাটি কেটে নিচ্ছে এবং জমির এসব মাটি স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছে তারা।
কৃষক মোঃ আবু তালেব বলেন, সংঘবদ্ধ দস্যুরা এলোপাতাড়ি মাটি কাটার কারণে জমিগুলোতে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এসব জমিতে এখন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষক মোঃ আমির হোসেন বলেন, নৌদস্যুদের এই জুলুম অত্যাচারে এ ফসলি মাঠের শতাধিক জমির কৃষক এখন মারাত্মক ক্ষতির সন্মৃখীন।
কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, দস্যুরা রাতের আঁধারে যেইসব নৌকা দিয়ে জমির মাটি কেটে নেয়, সেইসবের কিছু নৌকা দিনের বেলায় নদীপাড়ে ও অরুয়াইল বাজারের বিভিন্ন নৌঘাটে অবস্থান করার সময়ে মানুষের চোখে পড়ে। অথচ অরুয়াইল বাজারেই নৌপুলিশ সহ থানাপুলিশের ক্যাম্প রয়েছে।
কৃষক হাজী মোঃ ইসলাম উদ্দিন, মোঃ হামিদুল হক, মতর আলী, মোঃ আশ্রাফুল মিয়া অভিযোগ করেন, এ বিষয়টি এখানকার ক্যাম্পের পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা এ ব্যাপারটি গুরুত্বই দিচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা দাবি করেন, এখানকার নৌপুলিশের সঙ্গে ওইসব দস্যু অপরাধীদের দহরমমহরম আছে।
কৃষক মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কিছু অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দাখিল করেছি, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নেই। প্রতি রাতেই দস্যুরা জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে এখন চাষাবাদ সম্ভব নয়। যার ফলে আমাদের চোখের পানি ফেলা ছাড়া বিকল্প উপায় নেই।
স্থানীয় কৃষকদের এ বিষয়টি নিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে থাকা অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস.আই মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এ ঘটনায় সেই এলাকার অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়ায়, তাদের জমিগুলো চাষ করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। কিন্তু তথ্য প্রমাণ ছাড়া পুলিশ এ বিষয়ে কি করার আছে। তারপরও আমরা চেস্টা করবো। আর মাটি বহনে ব্যবহৃত নৌকা নিয়ে পুলিশ টানাটানি করলে এখানকার নৌ মালিক সংগঠনের লোকেরা ঝামেলা করতে পারে।
পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, রাতের আঁধারে এই জঘন্যভাবে জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় সেই এলাকার শতাধিক জমির কৃষকের যেই পরিমাণের ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, আশপাশের কিছু ইটভাটা এ মাটি কিনে নিচ্ছে, তারা এসব অপরাধীদের এ জঘন্যকাজে সহযোগিতা করছে। সেইসব ইটভাটার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে প্রশাসনকে চিঠি দেওয়ার কথাও বলেন ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম।
সরাইল থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে অরুয়াইল ক্যাম্পের ইনচার্জ এস.আই জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।