
রাউজান থানার ৭নং রাউজান ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড হরিষখান পাড়া গ্রামের জহুর মিয়া কোম্পানি বাড়ির লিস্টেড রাজাকার মৃত ইউনুস কোম্পানির পুত্র শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যা। ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ৭ মামলার ভয়ংকর এই সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ও বিভিন্ন থানার মামলার রেকর্ড অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যার বিরুদ্ধে রাউজান থানায় ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি, শতাধিক গুলি ছুড়ে সশস্ত্র দাঙ্গা-হাঙ্গামা, প্রতারণা, বনের গাছ কর্তন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, ইয়াবা সেবন ও পাচারসহ নানা অপরাধে ৭ থেকে ৮ টি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে ধর্ষণ, বন মামলা ও হত্যা মামলায় পৃথক পৃথকভাবে সাজা ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, ৪টি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে, মার্ডার মামলায় ২ নম্বর আসামি হলেও জামিনে নেই, প্রকাশ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা মামলায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি মামলায়ও ১ নম্বর আসামি হয়েও জামিনে নেই। এভাবে ভয়ংকর ৭ থেকে ৮টি মামলার আসামি হলেও প্রকাশ্যে ঘুরছেন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যা। এসব জঘন্য মামলা তার নামে থাকলেও মইন্যাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই।
এমনকি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রকাশ্যে বনের কাঠ কাটা ও ইয়াবা পাচার সহ বিভিন্ন অনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।এদিকে পিবিআই সূত্র জানা যায়, রাউজান উপজেলার হরিষখান এলাকার ওমান প্রবাসী শহীদুল আলম প্রকাশ শহীদ। গত ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের দিকে দেশে এসে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিল। শহীদ বিদেশ থাকলেও দেশে তার নিজস্ব একটি কাঠের ব্যবসা ছিল। ব্যবসা পরিচালনা করার সময় ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যা তার নিজের ব্যবসা ছেড়ে মইন্যার সাথে ব্যবসা করতে প্রস্তাব দেয়। এতে শহীদ তার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। এতে করে মইন্যা ক্ষেপে যায়। ২৫/০২/২০১৫ সালের বেলা আনুমানিক ২টার দিকে শহীদ চারাবটতলের উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তাকে অনুসরণ করে ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যা ও তার একটি সন্ত্রাসী বাহিনী একটি কালো মাইক্রোবাস ও পিছনে থাকা একটি সাদা কার যোগে ২৫/০২/২০১৫ সালের বেলা আনুমানিক ৩টার দিকে নিহত শহীদ কিছু বুঝে না উঠার আগে জৈনক জসিমের গ্রিলের দোকানে বিশ্রাম করাকালীন সময় মইন্যা ও তার গ্যাং-এর সদস্যরা শহীদ অতর্কিত কিছু বুঝে না উঠার আগেই কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে। এতে নিহত শহীদের বাম চোখ সহ কপালের উপরের অংশে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে মাথার খুলি সহ মগজ বের হয়ে যায়।
পরে নিহত শহীদের মা সখিনা বেগম(৬৫) রাউজান থানায় নিজে বাদী হয়ে সর্বমোট ১৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার রাউজান থানার মামলা নং- ১৪(০২)২০১৫ ও সি আর মামলা নং- ২৫৩৬/১৯। পরে উক্ত হত্যা মামলার দায়ভার আদালত পিবিআইকে দিলে তারা রিপোর্ট প্রদান করলে আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন।কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোন এক অদৃশ্য কারণে রাউজান থানা পুলিশ গত ৫ বছরে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে মইন্যা ও তার গ্যাং-এর অন্যান্য আসামীরা বুক ফুঁলিয়ে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা, গাছ কর্তন, চাঁদাবাজির মত বিভিন্ন কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে।গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত সাজাপ্রাপ্ত ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত ৮টি মামলার আসামি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় আমরা আতঙ্কে। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।শহীদ হত্যা মামলার বাদী সখিনা বেগম গত নয় মাস আগে মারা যান।
নিহত শহীদের বড় ভাই ও মেঝ ভাই বলেন, আমার ভাইকে ফজল কাদের মইন্যা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। মইন্যা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হলেও প্রকাশ্যে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় সে মাদক পাচার, চাঁদাবাজি সহ নামে-বেনামে লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা করে যাচ্ছে। এছাড়া আমরা আমার ভাই হত্যার বিচার চাইলেও আমাদেরকেও ভাইয়ের মত হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই তাকে গ্রেপ্তার করে আমাদের প্রাণ রক্ষা করুক।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাউজান থানায় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ওয়ারড্রবে পড়ে থাকা ওয়ারেন্ট ফাইলে ফজল কাদের প্রকাশ মইন্যার ওয়ারেন্ট নোটিশ সাংবাদিকরা থানায় গিয়ে খুঁজে বের করার ৭ দিন গত হলেও রাউজান থানা পুলিশ আজ অবধি গ্রেপ্তার করেনি আসামীকে।এ ব্যাপারে রাউজান থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, “ওয়ারেন্টভুক্ত কিংবা পলাতক আসামির প্রকাশ্যে ঘোরার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ যেকোনো ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তাকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হবে।”ওয়ারেন্ট নোটিশ গত ক’বছর ধরে থানায় পড়ে থাকলেও আসামীদের কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগে কেন গ্রেপ্তার হয়নি তা আমি জানিনা। তবে মইন্যাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। তবে আপনারা(সাংবাদিক) যদি কোন সুযোগ থাকে বা কোন সুযোগ পান তাকে ধরে আমাদের খবর দিতে পারেন!”
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ