
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয়ভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা করে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে আজ (১নভেম্বর) সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হয়ে ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। এতে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, যুবসেনা ও ছাত্রসেনার কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও মুসলিম জনতা অংশগ্রহণ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি নাইটিঙ্গেলে পুলিশী বাঁধার সম্মুখীন হয়।বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব আল্লামা এমএ মতিন বলেন- মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা কোন সভ্য জাতির কাজ হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সীমারেখা থাকা উচিত এবং লঙ্ঘন করা উচিত নয়।
আপনার মতামত ততক্ষণ স্বাধীন, যতক্ষণ তা অন্যকে আঘাত করে না। সকলকে অন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। ফ্রান্স সরকার বর্তমান উগ্র অবস্থান বিশ্বে শান্তি বিনষ্টে করছে। উগ্রবাদকে উস্কানি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রিয়ভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদের উস্কানি দিচ্ছে। যে মহানবী (দ.) মুসলমানদের নিকট প্রাণের চেয়ে প্রিয়, তাঁর অবমাননা বিশ্ব মুসলমান কখনও মেনে নিতে পারেনা। আল্লামা এম এ মতিন আরও বলেন- ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সরকারকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। অবিলম্বে ফ্রান্সের নিন্দনীয় কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ এবং ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্রান্স দূতাবাস বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়ে বলেন, সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে সারাদেশের মুসলমান ঈমানী দাবিতে রাজপথে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব জননেতা আল্লামা এম এ মতিনের নেতৃত্বে ঘেরাও কর্মসূচিতে দফতর সচিব মাওলানা আবদুল হাকিমের স ালনায় আরো বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নেতা অধ্যক্ষ আবু জাফর মুঈনুদ্দীন, সৈয়দ মুজাফফর আহমাদ মুজাদ্দেদী, কাজী মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিদ্দীকি আশরাফী, এডভোকেট কাজী ইসলাম উদ্দীন দুলাল,
কাজী মুবারক হোসেন ফরায়েজী, অধ্যক্ষ আল্লাৃমা আব্দুস সাত্তার, মাসুম বিল্লাহ মিয়াজী, গোলাম মাহমুদ ভুঁইয়া মানিক, মোহাম্মদ শাহ আলম, আনিসুর রহমান আনিস, এডভোকেট মোহাম্মদ ইকবাল হাছান, ডাঃ এস এম সরওয়ার, মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন তুষার, কাউসার আহমাদ রুবেল, এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ আবু নাসের মুসা, মুহাম্মদ নূরুল হক চিশতী, এডভোকেট সৈয়দ মুখতার আহমদ, মাওঃ বদরুল আলম কাদেরী, লোকমান মিয়াজী, শাহীদুল হক মামুন, মাওঃ আমিনুল ইসলাম আকবরী, তবারক হোসেন, মাওঃ ফরহাদুল ইসলাম বুলবুলি, কাজী মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন নুরী, হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক, মাওঃ আব্বাস উদ্দীন, আল মিরাজ, গোলাম পাঞ্জাতন প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব জননেতা আল্লামা এম এ মতিন পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- (১) ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের অপরাধে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক চিহ্ন করে বাংলাদেশে অবস্থিত ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ রাখতে হবে। (২) ফ্রান্সে অব্যাহত নবীজীর অবমাননার প্রতিবাদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে। (৩) মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ফরাসি পণ্য বর্জনে সরকারিভাবে ঘোষণা করতে হবে। (৪) ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে বিশ্বে সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ফ্রান্স সরকারে বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অবস্থান পরিস্কার করতে হবে।
(৫) সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে ফ্রান্সের মুসলমানদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ ও মসজিদসমূহ খোলে দিতে ওআইসি, বিশ্বমুসলিম নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহের জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যান্য বক্তারা বলেন, মহানবীকে অবমাননা করে ফ্রান্সের বিতর্কিত শার্লি এবদো ম্যাগাজিনে বারবার ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবার সেই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়ও বটে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ফ্রান্স সরকারের এহেন কর্মকা-ে নিন্দা জানাতে হবে। প্রাণাধিক প্রিয়নবীর অপমান, কোন মুসলমান সইবে না। তাই আজ আমরা রাজপথে।
সরকার আমাদের দাবি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশব্যাপি আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে। ইসলামী ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশী বাঁধারও তিব্র নিন্দা জানান।ঘেরাও কর্মসূচিতে আগত জনতার হাতের ফেস্টুন ও মুখে স্লোগান ছিল- প্রিয়নবীর অপমান- সইবেনা মুসলমান, ফরাসীপণ্য বয়কট কর-করতে হবে, অলি-আল্লাহর বাংলায়-নবীদ্রোহীদের ঠাঁই নাই, বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো- ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশাল সমাবেশ শেষে ঘাতক ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে তোপখানা, পল্টন অতিক্রম করে নাইটিংগেলে পুলিশের বাঁধার মুখে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে ঘেরাও কর্মসূচীর সমাপ্ত করা হয়।