আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে “লাঙ্গল” শব্দ নিয়ে যত্রতত্র ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার খোরাক যোগাচ্ছে। নানাভাবে প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ)নির্বাচনী এলাকায় একটি মহল, তবে আরেকটি অংশ সেটি নিয়ে একেবারেই নীরব। এতে এ নির্বাচনী মাঠে বিদ্যমান বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে যে যা-ই বলুক এ আসনের পর পর দ্বিতীয় বারের নির্বাচিত সফল এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গণমানুষের নেতা এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এখানে নানাভাবে প্রমাণ করেছেন “লাঙ্গলেই মঙ্গল”। তাছাড়া মানবকল্যাণ ও সমাজ উন্নয়নে তাঁর কাছ থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে।
গত কয়েকমাস আগে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের ডোবাজাইল এলাকায় একটি সড়ক উদ্বোধন ও দলীয় কার্যক্রমে যান সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা। অনুষ্ঠান শেষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফেরার পথিমধ্যে মাঠে জমিতে এক কৃষকের হাল চাষ দেখে তিনি এগিয়ে যান এবং সেখানে লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করেন। কৃষকদের উৎসাহ দিতে খালি পায়ে নিজে জমিতে নেমে পড়েন এমপি জিয়াউল হক মৃধা। বেশ কয়েকবার প্রদক্ষিণ করার পর তিনি জমি থেকে চলে আসেন।
সংসদ সদস্যের এমন কর্মকাণ্ড দেখে সেখানে উপস্থিত অনেকে আশ্চর্য হন। তারা এমপির এমন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন এবং সাংসদের এমন কাজে একদিকে কৃষকেরা যেমন উৎসাহিত হবেন, অন্যদিকে এখানে যারা উন্নয়নের ধারাকে বিভক্তির অপচেষ্টা করছে তাদের অন্ত চক্ষু খুলবে বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত লোকজন।
আমাদের সমাজে বিভক্তির ধারা বেশ পুরনো।
অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেখা যায় সমাজের একটি অংশ অন্যদের পিছনে লেগেই আছে।
“লাঙ্গল” হলো আবহমান বাংলার এক চিরায়ত ঐতিহ্যের পরিচায়ক। খেটে খাওয়া মানুষের এক মহামূল্যবান হাতিয়ার। নিকট অতীতে লাঙ্গল চষেই জীবন পার করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। লাঙ্গল চষে যিনি চাষাবাদ করতেন তিনিই চাষি অভিধায় সিক্ত হতেন। এই চাষি পরিচয়টাও এক সময় মানুষের আত্মপরিচয়ের একটি অবলম্বন ছিল। একজন চাষি সাহায্যের জন্য কারো মুখাপেক্ষী ছিলেন না। নিজের কায়িক পরিশ্রমের উপরই ভরসা ছিল তার। চাষাবাদের ওপর যে উৎপাদন হত তা দিয়েই অনায়াসে বছর পার করে দিতে পারতেন একজন কৃষিজীবী মানুষ।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি সম্পন্ন কৃষক পরিবারের ঘরের বারান্দার শোভা বৃদ্ধি করতো ঢেঁকি, লাঙ্গল, মই ইত্যাদি দিয়ে। সমাজ পরিবর্তনের ধারায় আর প্রযুক্তির বিকাশে এসব আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা যায়। যে পরিবারে গরু-মহিষ, লাঙ্গল আর মই দেখা যেত, তাদের সামাজিক অবস্থানও ততই মর্যাদা পেত। এ সমস্ত সম্পন্ন পরিবারের মানুষেরা তাদের বাড়িতে জায়গীর হিসাবে দূর-দূরান্তের স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্রদের জায়গা দিতেন। সে সময়ের নব্য শিক্ষিতদের বেশিরভাগ মানুষই এই সব কৃষিজীবী সম্পন্ন পরিবারের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ আর্থিক প্রতিপালনে বড় হয়েছিলেন।