
যৌতুক, মাদক, নারী ও শিশু নিপীড়ন থামাতে সরকারকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং যৌতুক ও মাদকবিরোধী হাজার হাজার যুবকের গণশপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদ কমপ্লেক্সে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৬ মার্চ শনিবার বিকেলে আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া বাংলাদেশ এর আয়োজনে যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন, যৌতুক দেয়াÑনেয়া দুটোই সমান অপরাধ। যৌতুক ও মাদককে ঘৃণা করতে শিখুন। বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়ে বর্তমান সরকার বাল্য বিয়ের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে।
ইনশাআল্লাহ অচিরেই দেশ যৌতুক ও মাদক থেকে অভিশাপমুক্ত হবে। যৌতুক ও মাদকবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ইনসাফভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই সরকারের বড় লক্ষ্য। যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়তে গণমাধ্যম ও মসজিদের ইমাম-খতিব উলামা পীর মাশায়েখসহ প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মহাসমাবেশে সহ¯্রাধিক তরুণ যুবক যৌতুক ও মাদককে সমস্বরে ‘না’ বলেন। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আনজুমানের চেয়ারম্যান ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব আন্তর্জাতিক বক্তা ও মুফাস্সিরে কুরআন পীরে তরিকত আল্লামা আবুল কাশেম নূরী (মুজিআ)।
মহাসমাবেশে উদ্বোধক ছিলেন আন্জুমান ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ দৌলতী। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক রসায়ন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নু ক ম আকবর হোসেন, কলামিস্ট ও রাজনীতিক ড. মাসুম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, পটিয়া পৌরসভা মেয়র আইয়ুব বাবুল, আহলে সুন্নাতের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা মুদাস্সির হাশেমী, পীরে তরিকত আল্লামা হারুনুর রশিদ রেজভী, আহলে সুন্নাতের নির্বাহী মহাসচিব আল্লামা মাসউদ হোসাইন আলকাদেরী, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল, তরিক্বত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আলী ফারুখী, চেয়ারম্যান পীতষ বাবু, মাওলানা কাযী আবুল ফোরকান হাশেমী,
অধ্যক্ষ আবু জাফর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন. সাংগঠনিক সচিব মুহাম্মদ আব্দুল মতিন. লায়ন নজরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ, মাওলানা আবুল কালাম। মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরীর স ালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আলহাজ¦ কাজী মুহাম্মদ ফোরকান রেজা। মহাসমাবেশে রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী এরশাদ মাহমুদ, তরুণ্যের অহংকার রাজনীতিক ফারাজ করিম চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা নূরুল আজিম রনিকে সমাজ সেবায় অসাধারণ অবদানের জন্য সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধেয় অতিথি ফারাজ করিম চৌধুরী বলেন, যৌতুক একটি মারাত্মক ব্যাধি। সামাজিক দুষ্টক্ষত। আইনি নিষেধ থাকলেও যৌতুক দেয়া-নেয়া এখনো থামানো যায়নি।
যৌতুক নিরোধ আইনের পুরোপুরি সুফল পেতে গণমাধ্যম, দেশবাসীসহ সকলকে সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেবল সরকারের পক্ষে যৌতুক ও মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। মেয়র আইয়ুব বাবুল পীরে তরিকত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে সূচিত যৌতুক বিরোধী আন্দোলনের জন্য আল্লামা নূরীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আলেম, উলামা, পীর মাশায়েখ, মসজিদের ইমাম খতিব, সামাজিক ফোরাম, গণমাধ্যম এবং সরকার সবার মিলিত প্রচেষ্টায় যৌতুক প্রথা থামাতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আবুল কাশেম নূরী বলেন, দেশ ও সমাজে যৌতুকের মতো একটি জঘন্য ব্যাধি ভয়ংকর রূপ নেবে, আর আমরা আলেম সমাজ তা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা কখনো হতে পারে না।
যৌতুক-মাদকসহ সকল প্রকার সামাজিক ব্যাধি থেকে নিষ্কৃতির জন্য আলেম, ইমাম ও পীর মাশায়েখকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। না হয় আল্লাহর আদালতে আমরা কী জবাব দেবো? তিনি যৌতুক, মাদক, নারী ও শিশু নিপীড়ন থামাতে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে আরো ঢেলে সাজানোর তাগিদ দেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ইসলামে যৌতুকের স্থান নেই। যৌতুক নামক এই সামাজিক ব্যাধি থেকে রেহাই পেতে সচেতনতা কামনা করেন তিনি।
অধ্যাপক নু ক ম আকবর হোসেন বলেন, যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। ইসলামী নির্দেশনা মেনে বরের সাধ্যানুযায়ী মুহরানা ধার্য করতে হবে। মনীষী মোতাহের উদ্দিন চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে অধ্যাপক মাসুম চৌধুরী বলেন, কেউ নাড়া দেয়, কেউ সাড়া দেয়। আল্লামা নূরীর আহ্বানে যৌতুকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে সর্বাত্মক সাড়া দিতে হবে। আন্জুমান ট্রাস্ট সেক্রেটারী আব্দুর রশিদ দৌলতী সাম্প্রতিককালের নারী নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সামাজিক জাগরণ ও আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া নারী নিপীড়ন ও যৌতুক প্রথা নির্মূল অসম্ভব।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলহাজ¦ নুরুল হক, মুহাম্মদ আবু ছালেহ আঙ্গুর, মুহাম্মদ মিঞা জুনায়েদ, মুহাম্মদ আবুল হাসান, মুহাম্মদ জাহিদুল হাসান রুবায়েত, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাদের রজভী, মুহাম্মদ শহীদ, মুহাম্মদ তারেক আজিজ, সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজানের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফরিদুল আলম, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ওসমান, এস এম ইকবাল বাহার, মাওলানা আবুন নূর মুহাম্মদ হাস্সান নূরী, মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সিদ্দিকী, মুহাম্মদ জাহেদ প্রমুখ। মহাসমাবেশ শেষে আন্দোলনের এক যুগ পূর্তিতে বণার্ঢ্য র্যালী জমিয়তুল ফালাহ হতে কাজীর দেউড়ী- লালখান বাজার হয়ে পুনরায় জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে এসে সমাপ্ত হয়।