
আরিফুল ইসলাম সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ছায়েদুল হক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে যিনি পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হলে তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এতোকিছু হওয়ার পরও জীবনের শেষদিকেও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সেই পুরনো টিনশেড ঘরেই ঘুমোতেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক।
আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা ছিলেন সততার মূর্ত প্রতীক। অর্থ প্রাচুর্য কোনো কিছুতেই মন ছিল না তাঁর। এলাকার উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষ নিয়েই ভাবতেন তিনি।
সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের আপনজন বলে খ্যাত ছায়েদুল হকের জীবনযাত্রা ছিল একেবারেই সাদামাটা। তিনি প্রায়ই বলতেন ‘দুনিয়ার চাকচিক্ক থাকবে না, একদিন সবকিছুর হিসাব দিতে হবে।’ তাইতো পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও এবং একজন পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েও কোনো সম্পদ গড়তে পারেননি তিনি।
তাঁর নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বাভাগ গ্রামের উত্তরপাড়ায় রয়েছে দুটি টিনের ঘর। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ দুটি টিনের ঘরই তার একমাত্র সম্বল ছিল। দীর্ঘদিনের পুরোনো দুই ঘরের একটিতে থাকতেন মন্ত্রী আর অন্যটি ছিল তার বৈঠকখানা।
শুক্রবার (৯নভেম্বর) বর্ষীয়ান এ নেতা ছায়েদুল হকের বাড়িতে গেলে প্রতিবেশী লোকেরা জানান, ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে ওই টিনের ঘরে পুরনো খাটেই ছায়েদুল হক ঘুমাতেন। তাঁর নিকট আত্মীয়রা জানান, কোনো কিছুর প্রতি লোভ ছিল না তাঁর। সবাইকে শুধু বলতেন একদিন সবকিছুর হিসাব দিতে হবে। তিনি কখনো অন্যায় কাজ করেননি। পাঁচবার এমপি, পরবর্তীতে মন্ত্রী হয়েও সবসময় সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করেছেন। গ্রামের মানুষদের তিনি বলতেন আমি এমপি-মন্ত্রী না, আমি তোমাদের ছায়েদুল হক।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছায়েদুল হক ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর আকস্মিক অসুস্থতায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও মায়ের কবরের মাঝখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন ছায়েদুল হক।
উল্লেখ্য, ছায়েদুল হক ১৯৪২ সালে নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের পূর্বভাগ গ্রামের উত্তপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের খ্যাতনামা এ আইনজীবী ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও তিনি বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন।