
হাসান আহমম::
দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ স্থানটি প্রতিনিয়ত পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। পর্যটকদের ভ্রমণকে আনন্দদায়ক ও সার্থক করে তোলে এ উপজেলার প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য।
নীল রঙে রূপায়িত নীলাদ্রি। এ যেন নীলের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া । হ্যা নীলাদ্রির কথা বলছি, ভাবছেন এটা আবার কি? এই স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরা জায়গাটা কাশ্মীর নয় আমাদের দেশেই ! কি অবাক হচ্ছেন।
ছবি দেখে কাশ্মীর ভেবে ভুল করবেন না,একে নীলাদ্রি নামেই চেনে সবাই। এর অবস্থান টেকেরঘাট, সুনামগঞ্জে। এর অপরূপ সৌন্দর্যে ডুব দিতে নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে আসুন সুনামগঞ্জ থেকে।
অনেকেই সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে যান। কিন্তুু এর আশেপাশেই অনেক সুন্দর সুন্দর নয়নাভিরাম জায়গা আছে যা যে কোনো পর্যটকের মনকে মুহূর্তেই দোলা দিয়ে যেতে পারে।
এমনই একটি জায়গা টেকেরঘাট চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনির লাইমস্টোন লেক। স্থানীয় লোকজন একে নীলাদ্রি লেক বলেই জানে। এর নামটা যেমন সুন্দর এর রূপটাও তেমনি মোহনীয় । নিজ চোখে না দেখলে হয় বিশ্বাসই করতে পারবেন না পানির রঙ এতটা নীল আর প্রকৃতির এক মায়াবী রুপ। মাঝের টিলা গুলা আর ওপাড়ের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশ এর শেষ সীমানা। বড় উচু পাহাড়টিতেই সীমানা কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। এই লেকটি এক সময় চুনা পাথরের কারখানার কাচামাল চুনা পাথরের সাপ্লাই ভান্ডার ছিল যা এখন বিলীন।
কিভাবে নীলাদ্রি দর্শনে যাবেন ?
রুট-১: ঢাকা থেকে শ্যামলী/মামুন/এনা এবং আরও কিছু বাস যায় সুনামগঞ্জে, যে কোনো একটাতে উঠে পড়ুন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা । সুনামগঞ্জ থেকে নতুন ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে হবে। চাইলে টেকেরঘাট পর্যন্ত সরাসরি মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা নিতে পারে আর মাঝপথে যাদুকাটা নদী পার হতে জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা আর মোটর সাইকেল এর ভাড়া ২০ টাকা করে পড়বে ।
এছাড়া আপনি সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়ের গড় পযন্ত মোটর সাইকেলে করে যেতে পারেন ভাড়া ২০০ টাকা । তারপর যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যেতে পারবেন। এখানে উল্লেখিত মোটর সাইকেল এর ভাড়া যেটা উল্লেখ আছে, তা দিয়ে বাইকের দুইজন যাত্রীই যেতে পারবেন। তবে মোটর সাইকেলের ভাড়া নিয়ে আগেই দামাদামি করে নিলে ঠকবেন না। এরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে বলে অপরিচিত মুখ দেখলে।
সবথেকে কম খরচে, আরামে, কম সময়ে খুব সহজে পৌঁছানো যায়। কেউ যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যেতে চায় মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) পর্যন্ত নিজের গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। মাইক্রোবাস বা কার বা জীপ যে কোনো গাড়ি দিয়ে। রাস্তা খুব সুন্দর।
ভাবছেন থাকবেন কোথায় ?
বেশকিছু রেস্ট হাউজ এবং গেস্ট হাউজ আছে বড়ছড়া বাজারে । সেখানে আপনি ২০০-৪০০ টাকায় এক রাত থাকতে পারবেন। বারিক্কা টিলা পাড় হয়েই বড়ছড়া বাজারটা চোখে পড়বে । চাইলে টেকেরঘাট থেকে হেঁটেও আসতে পারবেন বড়ছড়া বাজারে, মেঠো পথ ধরে হাঁটতে ভালোই লাগবে । এছাড়াও লেকের পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চুনা পাথরের কারখানা আছে। কারখানাটির গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন যদি খালি থাকে।
খাবার-দাবার :
বারিক্কা টিলাতে খাবারের হোটেল আছে, এছাড়াও বড়ছড়া বাজারে খেতে পারেন অথবা লেকের পাশেই টেকেরঘাট একটা ছোট বাজার আছে, একটা মাত্র হোটেল আছে খাবারের। অবশ্যই আগে দাম জেনে খাবেন।
কিছু পরামর্শ :
এখান থেকে খুব বেশি পরিমাণে চুনা পাথর উঠানো হতো, যার ফলে লেকটি বেশ গভীর। লেকের পানিতে সাঁতার না জানলে না নামাই ভালো। নামলেও বেশি দূরে যাবেন না। যেহেতু সীমান্ত এলাকা তাই সাবধানে থাকুন। সীমানার খুব কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো ।