সন্ত্রাস দমন-মাদক চোরাচালান রোধে তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতা সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও মাদক চোরাচালান রোধে তুরস্কের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সয়লুর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এই সমঝোতা সই হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সয়লু এসেছিলেন। তার সঙ্গে আজ সকাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং হয়েছে। এখন আমরা দ্বিপাক্ষিক যে আলোচনা সেটা শেষ করলাম। এটা তুরস্কের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথমবার আমি তাদের আমন্ত্রণে আঙ্কারায় গিয়েছিলাম ২০১৯ সালে। তার আগেই আসার কথা ছিল, কোভিডের কারণে আসতে পারেননি। এখন তিনি এসেছেন।’সুলাইমান সয়লুর সঙ্গে সেদেশের দুজন প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসেছিলেন বলে জানান আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়েছে। আমাদের পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার সব ডিপার্টমেন্টেই তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন এবং আমাদের কোনো প্রয়োজন থাকলে সেগুলোও তারা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।‘আমরা ট্রেনিংয়ের কথা বলেছি, আমরা ইন্টেলিজেন্ট শেয়ারের কথা বলেছি। আমরা সাইবার ক্রাইম দমনের কথা বলেছি। আমরা কথা বলেছি, আমাদের পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি, আনসারকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য। তারা সবগুলোতেই একমত হয়েছেন।’
আনসার ও পুলিশকে তুরস্ক বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং দিয়ে আসছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা কন্টিনিউ থাকবে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) সাইন হয়েছে। এর মূল বিষয় ছিল- কাউন্টার টেরোরিজম (সন্ত্রাস দমন), সিকিউরিটি কো-অপারেশন (নিরাপত্তা সহযোগিতা) ও মাদক চোরাচালান রোধ। এগুলো নিয়েই এমওইউ সাইন হয়েছে।
এই এমওইউর পর তারা তাদের সহযোগিতা আরও বাড়াবে বলে মন্ত্রী মহোদয় (তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন। এই ছিল আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।’স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তারা (তুরস্ক) আগেও যেমন ভূমিকায় ছিলেন, এখনো তেমন শক্ত ভূমিকায় আছেন, আমাদের নিশ্চয়তা দিয়ে গেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তো বটেই, যেসব রোহিঙ্গা আছে তারা তাদের সহযোগিতা করে যাবেন।
তারা রোহিঙ্গাদের জন্য হাসপাতাল স্থাপন করেছে, তারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে।’‘আমরা বলেছি, তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী রেখেছো। রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক, প্রধানমন্ত্রী তাদের থাকার জায়গা দিয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে যা করণীয় তা করবেন। এমনকি তারা কাল ভাসানচরে লোক পাঠিয়ে দেবেন। ভাসানচরে তারা কী করতে পারেন, সেটা অ্যাসেস (মূল্যায়ন) করে সেখানেও তারা সহযোগিতা করবেন।
’ তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক বলেও জানান আসাদুজ্জামান খান কামাল।‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কোনো দেশের আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়’ তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলাইমান সইলু এমন কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে আসার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতিসৌধে তিনি ফুল দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিসৌধ ও তার বাড়ি দেখে তিনি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।
তাদেরও এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে বাংলাদেশ সাপোর্ট দিয়েছিল, সেজন্য তারা সব সময় আমাদের সেই বিষয়টি স্মরণ রাখছে। দুঃখজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন তাদের নিন্দা করেছেন। এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য তারা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এটাও তিনি জানিয়ে গেছেন।’শনিবার সকাল ৮টায় বিশেষ বিমানে করে তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে সরাসরি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সুলাইমান সয়লু।