
আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের যুব বিষয়ক উপদেষ্টা আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে মহাজোট প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অাজ বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এক সাক্ষাতকার দেন। এসময় তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এ সাক্ষাৎকারে রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া বলেন, আমি কি বাড়িঘর ছাড়া মানুষ, দলের প্রার্থী হয়ে আত্মীয়ের (শ্বশুরবাড়ি) বাড়ির এলাকায় গিয়ে নির্বাচন করে এমপি হতে হবে। সেখানে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন) জিয়াউল হক মৃধা আছেন, তিনি নির্বাচন করবেন। আমার নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) সংসদীয় আসন। আমি এ আসন থেকে নির্বাচন করবো।
উল্লেখ্য, দুইদিন আগে প্রচার হয় অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া মহাজোট প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন এবং দলীয়ভাবে এ আসনে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত।
এমন খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রেজাউল ইসলামের শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার সমর্থকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রয়ার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা বিষয়টি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় শ্বশুর (জিয়াউল) ও জামাতার (রেজাউল) ছবি পোস্ট দিয়ে নানা মুখরোচক মন্তব্য লিখেন। জিয়াউল হক মৃধাকে এ আসনের আবারো এমপি প্রার্থী দাবি করে রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়াকে “বহিরাগত” আখ্যায়িত দিয়ে তাকে এখানে প্রতিহতের ঘোষণাও দেন সাংসদ জিয়াউল হকের সমর্থকরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার এসবের প্রতিক্রিয়ার জবাবে জা’পার কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া বলেন, ‘ফেসবুক’ এখন বাজে মিড়িয়া হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারে, সেইভাবে ইচ্ছে মতে যা খুশি তা-ই লিখে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি সরাইল ও আশুগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবো এসব চিন্তাও করি না। সেই আসনে জিয়াউল হক মৃধা দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মুরব্বী, আমার আত্মীয় (শ্বশুর)।
রেজাউল ইসলাম আরো বলেন, জিয়াউল হক মৃধার এমপি’গিরি আমি এনে দিয়েছি। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত করেছি। তাঁর এমপি হওয়ার পেছনে আমার অনেক অবদান রয়েছে। সেইখানে জাতীয়পার্টির এমপি’র মাঠ আমি সৃষ্টি করেছি। আমার হাতে গড়া সেই মাঠ আমি কেন নষ্ট করবো।
মহাজোট প্রার্থী হিসেবে দল আপনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেটি আপনার চাওয়ার ভিত্তিতেই হয়েছে, এই বিষয়টির সত্যতা কতটুকু এবং আপনি যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নির্বাচন না-ই করেন, তাহলে কি আমরা ধরে নিব জিয়াউল হক মৃধার নমিনেশন এ আসনে চূড়ান্ত।
এসব প্রশ্নের জবাবে রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া কৌশলে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বলেন, সত্যি বলতে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে কারোরই দলীয় নমিনেশন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে মহাজোট নেতাদের সাথে আমাদের দেন-দরবার চলতেছে। কিছু মিডিয়া মহাজোটের নমিনেশন নিয়ে তাদের মনগড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছে। আর এসব দেখে অনেকেই লাফালাফি করছে। আসলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জিয়াউল হক মৃধার মনোনয়নের বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনে অনেক চমক আছে, ২৫ নভেম্বরের পর সবকিছুই পরিস্কার হবে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয়পার্টির অন্যতম একজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়ার রাজনৈতিক ঘনিষ্ট সহকর্মী তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের জানান, দুই দিন আগে রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে তার প্রার্থীতা নিশ্চিত করে দলীয় প্রধানের একটি চিঠি মহাজোটে জমা দেন এবং এর রিসিভ কপি সংগ্রহ করার পর তিনি (রেজাউল) তার দলীয় অনুসারীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এখন তিনি শ্বশুরবাড়ির ও ঘরের-বাহিরের চাপে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন।
তবে তিনি এইবার নির্বাচনে দলের নমিনেশন পেতে মরিয়া হয়ে লড়ছেন। বর্তমানে তিনি বেকায়দায় আছেন তার শ্বশুর সাংসদ জিয়াউল হককে নিয়ে। কারণ মহাজোট এই নির্বাচনে শ্বশুর ও জামাই দুইজনকে তো আর নমিনেশন দিবে না। তবে এই নির্বাচনে রেজাউল ইসলাম তার শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধাকে শেষ পর্যন্ত ছাড় দিবেন কিনা তা এখন দেখার বিষয়, এমন মন্তব্য করেন জেলার জা’পার এ নেতা।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা সাংবাদিকদের জানান, রেজাউল ইসলাম ভূইঁয়া এই আসন থেকে নির্বাচন করবে, এটা হতেই পারেনা। এখানে আমি জাতীয়পার্টির একক প্রার্থী। আমিই মহাজোটের নমিনেশন পাবো।