
আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
টেলিভিশন টক-শো’র বিশিষ্ট সুবক্তা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে নির্বাচনী মাঠে প্রতিহতের ঘোষণা দিলেন সরাইল উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ আনোয়ার হোসেন মাস্টার।
শনিবার (২৪ নভেম্বর) এ প্রতিবেদকের সাথে এক সাক্ষাতকারে এই বিএনপি নেতা এ প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
সাক্ষাতকারে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, রুমিন ফারহানা এই নির্বাচনী এলাকার ভোটার নই।
সে কখনো এখানে আসেনি, তৃণমূল নেতৃবৃন্দ তাকে ভালোভাবে চিনে না, এইরকম প্রার্থী এখান থেকে এমপি নির্বাচন করবে, তা মেনে নেওয়া যায় না। তাকে এখানে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে।
বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, আমি এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিগত এক’এগারো সময়ে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। দলের জন্য যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলাম। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আশা করি সেই ত্যাগের মূল্যায়ন দল এখন করবে। তবে রুমিন ফারহানাকে এখানে মেনে নেওয়া হবে না। দল এখানে তাকে মনোনয়ন দিলে, এখানকার দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাকে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতেই দিবে না। প্রয়োজনে আমি দলের রাজনীতির মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবো। এর জন্যে এখানে অনেক কিছুই হবে।
এদিকে এখানে নির্বাচনী মাঠে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার প্রার্থীতা নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে এখানে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা অব্যাহত আছে।
চুন্টা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমান উল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, এ আসনটি মহাজোটের দখলে। আসন পুনরুদ্ধার করতে চাইলে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন প্রার্থীর প্রয়োজন। তা রুমিন ফারহানাকে দিয়ে সম্ভব নয়। কালীকচ্ছ ইউনিয়নের দলের ত্যাগী নেতা মোঃ ইকতিয়ার হোসেন জানান, এখানে তৃণমূলের প্রার্থীর দরকার। অজানা অচেনা প্রার্থী হলে এখানে দলের জয়ের ব্যাপারে ঝুঁকি থাকবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু এ প্রতিবেদককে জানান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দলের কেন্দ্রীয় নেতা এবং টেলিভিশনে ভালো টক-শো করে থাকেন। তবে টক-শো ও তৃণমূলের রাজনীতি এক কথা নয়। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) নির্বাচনী এলাকায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকায় তিনি নির্বাচন করে তেমন সুবিধা করতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার এখানে প্রার্থীতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দল তাকে এখানে মনোনয়ন দিয়ে জয়ের ব্যাপারে এই আসনটি ঝুঁকিতে ফেলবে বলে আমি মনে করি না।
কালীকচ্ছ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দলের প্রবীণ ত্যাগী নেতা মোঃ বাচ্চু মৃধা বলেন, কেউই দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের তেমন খোঁজখবর রাখেন না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে এখানে মনোনয়ন দেন তাহলে দোষের কি ? দলের স্বার্থে আমরা তাকেই নির্বাচিত করবো।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান জানান, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব দেয়া খুবই জরুরি। রুমিন ফারহানাকে এখানে কেউ তেমন চিনেন না, তাকে এখানকার নেতাকর্মীরা মেনেও নিবেন না। তিনি বলেন, এই আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৩৪ হাজারেরও বেশী। এরমধ্যে ২ লক্ষ ২১ হাজার ভোট সরাইল উপজেলায়। এখানে অন্তত ৮০ ভাগ ভোট বিএনপির। এটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সরাইলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখানে রুমিন ফারহানাকে চান না, কেন্দ্রের নেতারা বিষয়টি বুঝা উচিত।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মোঃ আজমল হোসেন ছোটন জানান, সরাইল বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতা এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অনেকে দলের জন্য জেল খেটেছেন, বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে এই আসনে রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দিলে দল এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই নির্বাচন বড় কঠিন নির্বাচন। এটি বিএনপির ঘাঁটি। এই ভোট ব্যাংক বিএনপি দখলে নিতে হলে স্থানীয় প্রার্থীর প্রয়োজন, বাহির থেকে রুমিন ফারহানা এখানে এসে সুবিধা করতে পারবেন না। আমরা দলের ভালো চাই, আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তজাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ২৫টি মামলা রয়েছে। আমি এসব মামলার হাজিরাও দেয়, দলের জন্য কাজও করি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। সরাইলে দলীয়ভাবে আনোয়ার হোসেন মাস্টারের নামে কয়টি মামলা আছে ? সে (আনোয়ার মাস্টার) ওইখানে বসে দলের ব্যাপারে কি ভূমিকা রেখেছে, তা সেখানকার নেতাকর্মীরা সবকিছুই জানেন। ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকার অনেকের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে।
রুমিন ফারহানা জানান, মা (বেগম খালেদা জিয়া) জেলে। আমার নেতা (তারেক জিয়া) লন্ডনে। বিএনপি এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমি মনে করি সকলেই এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে শক্তিশালী করা উচিত। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা প্রয়োজন। দলের বৃহৎ স্বার্থে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আশা করি দলের প্রতি আমার ত্যাগ ও আমার ভূমিকা বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। মনোনয়ন পেলে এ আসনটি উদ্ধার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেব।