নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ৩০ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ ফটিকছড়ির বাবর উদ্দিন (৩৩) প্রকাশ গুটি বাবর নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। গত সোমবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আষাঢ়িয়ারচর এলাকা থেকে র্যাব-৩ ইযাবাসহ তাকে আটক করে।জানা যায়, র্যাবের হাতে আটক বাবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বখতপুরের ঝর্ণার দীঘি পাড় এলাকার আমির ভূঁইয়ার বাড়ির মৃত মূসার ছেলে।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) বীণা রানী দাস জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোনারগাঁ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ তাকে আটক করা হয়। আটক বাবর স্বীকার করেছে যে, দীর্ঘদিন যাবত টেকনাফ কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে উত্তর চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম শহর এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা পারিবারিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাইকারী দরে বিক্রয় করে আসছিল।
র্যাব-৩ জানান, দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে আরো জানা যায়, বাবর তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। পূর্বে তাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল বর্তমানে তারা ইয়াবা ব্যবসা করে গাড়ি বাড়িসহ স্থাবর অস্থাবর অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। আরো জানা যায়, নানার বাড়ি টেকনাফে হওয়ার সুবাদে সহজে ইয়াবা ব্যবসায় তাদের আগমন ঘটে।
দূরের আত্মীয়তার বন্ধন ধরে রাখতে, বড় বোনকে নিজ মামতো ভাইযের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। মামার বাড়ি ও বোনের বাড়িতে আসা যাওয়ার সুবাদে, রাজনীতিকে হাতিয়ার করে ইয়াবা আসক্ত তার বড় ভাই কামাল পাশা বাদল প্রকাশ গুটি বাদল প্রথমে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরে ইয়াবা ব্যবসার প্রসারে তার আর এক ছোট বোনকেও মামার পরিবারে বিয়ে দিয়ে তাদের ও নানার বাড়ির পুরো পরিবার এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়।
ধীরে ধীরে চাহিদা ও ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায তাদের অপর ভাই জামাল পাশা দুলাল ব্যাংকিং পেশার সুবাদে হাটহাজারীর মুনিয়া পুকুর পাড়ের ব্যাংকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে না থেকে অক্সিজেন এলাকায় বাসা নিয়ে তাদের ব্যবসার হাল ধরে এই অবৈধ ব্যবসার পরিধি আরো বৃদ্ধি করে।
সেই ব্যবসাকে আরো নির্বিঘ্ন করতে বাবর উদ্দিনকে টেকনাফে তাদের এক মামতো বোনের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে।
এতে নানা বাড়ি ও বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ দুই বোন ও এক ভাইয়ের নিকট আত্মীয়দের কাজে লাগিয়ে মাদক পাচারে টেকনাফ কক্সবাজার অক্সিজেন হয়ে ফটিকছড়িতে ইয়াবার একটি নিরাপদ রোড তৈরি করে বাবর উদ্দিন। বড় এক ভাইয়ের ব্যাংক পেশা ও অপর এক ভাইয়ের রাজনীতির ছত্রছায়ায কোন বাধা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় ইয়াবা ব্যবসা করে, ফটিকছড়ির ইযাবা সম্রাট বাবর এলাকায় গুটি বাবর হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
তাদের অবাধ মাদকের ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং এর কারণে ফটিকছড়িবাসী ছিল অতিষ্ঠ কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা ছিল সব সময় আইন শৃঙ্খলাা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে।এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অভিযোগ কথা স্বত্তেও বারবার পুলিশ তাদেরকে না ধরে, শাক দিয়ে মাছ ডাকতে, নিরাপরাধ অন্য এক বাবরকে ধরে নিয়ে যায়। যার কারণে এলাকার অনেক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বাবর র্যাবের হাতে আটক হওয়ায় এলাকাবাসীর বিশ্বাস অন্তত এইবার মানুষ ইয়াবা সম্রাট গুটি বাবরের ও তার পারিবারের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এলাকা হবে ইয়াবা ও কিশোর গ্যাং মুক্ত।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জামাল পাশা দুলাল ব্যাংক পেশার অড়ালে এই ব্যবসার নেটওয়ার্ক চট্টগ্রামের পর রাজধানীতেও বিস্তৃত করেছে।
সহজলভ্য ইয়াবা সেবনের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এলাকার উঠতি বয়সী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া যুবসমাজ। পারিবারিক সিন্ডিকেটের ইয়াবা ব্যবসাকে আড়াল করতে, সেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে, তার বড় ভাই কামাল পাশা বাদলকে রাজনীতিতে এবং ছোট ভাই বাবর উদ্দিনকে খেলা দুলাতে সম্পৃক্ত করে রেখেছে। বিয়ে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্লাব মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনুদানের মাধ্যমে সমাজ সেবার আড়ালে তারা এলাকাকে জিম্মি করে রেখেছে।
তাছাড়া এলাকায় রয়েছে তাদের নিজস্ব কিশোর গ্যাং যারা কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর চড়াও হয। যার ফলস্বরূপ তাদের ব্যবসা ওপেন সিক্রেট হলেও কেউ তা বলার সাহস করে না। ভুক্তভোগী ও এলাকার সচেতন মহলের দাবি, এখনই যদি তাদেরকে আইনের আওতায আনা না হয়, তবে দেশের তরুণ সমাজ ধ্বংস হবে এবং মানুষের মাঝে অবৈধ কাজের আগ্রহ বাড়বে।
কারণ একটা সামান্য ব্যাংকের চাকরির আড়ালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে এত বড় পরিবারের ব্যযভার বহন পূর্বক গাড়ি বাড়িসহ শূন্য থেকে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আয়ত্বে রেখে তারা তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যাহা অর্থলোভী তরুন সমাজকে বিপথগামী করবে বলে এলাকাবাসী মনে করে।