ভক্তের চিঠি ১৮বছর পরে পড়ে কাঁদলেন কণ্ঠশিল্পী-আসিফ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী লাখো তরুণ-তরুণীর আইডল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরকে এক তরুণীর লেখা চিঠি ১৮ বছর পরে এসে আসিফের হাতে এসে পৌঁছায়! তিনি ওই চিঠি পড়ে আবেক আপ্রূত হয়ে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে জল চলে আসে তার। সময়টা ২০০৫ সাল তখন শিল্পী আসিফ আকবর বাংলাদেশের একমাত্র কণ্ঠশিল্পী যার গান সবার মুখে মুখে শোভা পেত এ সময় ছিল না আজকের মত সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ তাই ওই ভক্ত নিজের পছন্দের আইডলকে হাতের লেখা একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ওই চিঠি টি সেই ২০০৫ সালে লেখা।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজের ভক্তের চিঠি পড়ে তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট করেন, সেই পোস্টটি অজানা বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো
জ্যাম এড়াতে মাঝেমধ্যেই রিক্সায় চড়ে স্টুডিওতে যাই। সময়মত কাজে পৌঁছানো আমার পেশাদারীত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার। গতকাল আমার পিছনে একটা খালি রিক্সার চালক উদাস মনে গাইছিলো – যেতে চাইলে কাউকে ধরে রাখা যায়না গানটি। মগবাজার রেলক্রসিংয়ের প্রচুর শব্দ আর হালকা ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে নিজের গান শুনতে বেশ ভাল লাগছিলো। একটু পর সে আমার রিক্সা ক্রস করতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। গাইতে গাইতেই সালাম দিয়ে হাসিমুখে চলে গেল।
একফাঁকে বললো আজকে আমার জীবন ধন্য। তবে কোন সেলফির ঘটনা ঘটেনি। বহনকারী রিক্সাওয়ালা মামা আমাকে চেনেন না, তিনি বললেন- এই ছেলেটারে চিনেন মামা। বললাম – আমি তাকে চিনিনা, সে আমাকে চেনে। তিনি ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না, আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আইদাহ্ দুপুরে আমার সাথেই খেলে। ওর সাথে খেলার সময় ড্রইংরুমে হঠাৎ করে একটা মুখবন্ধ খামের উপর চোখ গেল, তারিখ লেখা ০৯/০৫/২০০৫। খুলে দেখলাম ভিতরে ছবি, সঙ্গে একটা চিঠি।
ওর নাম শারমীন আক্তার মুন্নী, জোরারগন্জ, মীরসরাই, চট্টগ্রাম। আমাকে চাচ্চু সম্বোধন করেই লেখা। আমার ব্যক্তিজীবমন গান পরিবার সব তার পছন্দ। একদিন অনেক বড় গায়িকা হবার ইচ্ছে তার। চিঠিটা অন্য কারো হাতে পরলে অবশ্যই যেন আমাকে পৌঁছে দেয়, এটা তার আকুতি। সেই চিঠি আঠারো বছর পর আজ খুলে দেখলাম। পড়তে গিয়ে চোখের কোনে পানিই চলে আসলো। অদ্ভূত অপরাধবোধ আর শূণ্যতায় বুকটা হাহাকার করে উঠলো।
মেয়েটা নিশ্চয়ই এখন ম্যাচুরড, নিশ্চয়ই তার মনে একটা গুমোট অতৃপ্তি রয়ে গেছে যেটার দায়ভার সম্পূর্ন আমার। পরিত্যক্ত ট্রাভেল স্যুটকেস আর কার্টনভর্তি লাখো চিঠি বেগমের সংগ্রহে, সেগুলো খোলার সময়ই মেলেনি। ফ্যানরা যেভাবে আমার অ্যালবামগুলো আগলে রেখেছে অসীম আবেগ দিয়ে, বেগমের কাছেও তাদের সব চিঠি সযত্নে রাখা রংবেরং এর স্মৃতি নিয়ে। মানুষের স্বপ্ন বিস্তৃত থাকে পাহাড়ের মত উঁচুতে অথবা সমূদ্রের মত বিশালতায়, হতাশা আসে মরুভূমির মত।
আমার স্বপ্নগুলো হয়ে গেছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ( গিরিখাত) মত, নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তাল খরস্রোতা কলোরাডো নদীর মত দুই পাড় ভেঙ্গেচুরে অজানা রোমাঞ্চকর গন্তব্যের দিকে ধাবমান। আমার আইকন সৈয়দ আবদুল হাদী ভাইকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম – আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন না কেন! প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন- এসব ন্যুইসেন্স কাজে আমি নেই, তার চেয়ে লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকাই বেশী আনন্দের। বহুবছর পরে মনে হলো আমার আসলে গোছানো কোন অবসরের সুযোগ নেই।
ভক্তের চিঠি ১৮বছর পরে পড়ে কাঁদলেন কণ্ঠশিল্পী-আসিফ শান্ত স্নিগ্ধ সৌম্য টাইপ শব্দগুলো আমার সাথে যায়না। কলোরাডো নদীর মত স্বগর্জনে গিরিখাত কাঁপানো গতিপথই আমার নিয়তি। তবুও পড়তে হবে, এই হাজার হাজার চিঠির ভিতরে আটকে থাকা আবেগগুলোর নির্যাস নেয়ার সময় এসেছে, সব ধুলো মুছে আবারো একাকার হয়ে যাবো পুরনো ভালবাসায়…
ভালবাসা অবিরাম…
ছবিতে ছোট্ট মুন্নীর সাথে নিজেকে জুড়ে দিলাম…