আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, চাচা আজকে দেখেন আপনার পাশে কেউ নাই, কেউ থাকবেও না, একজন যুদ্ধাপরাধী, একজন রাজাকার, যে পাকিস্তানি আর্মিদের খাদ্য সাপ্লাই দিছে, তার কাছে আওয়ামী লীগ কোনোদিন সুরক্ষিত থাকতে পারে না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠক করেন। কারণ হলো চাচা (জাফর উল্লাহ) পকেট থেকে টাকা বের করবে না। মইরা যাবে, মাল বের হবে না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠক করেন। কারণ হলো চাচা (জাফর উল্লাহ) পকেট থেকে টাকা বের করবে না। মইরা যাবে, মাল বের হবে না।
সিকদার সজল
বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌরসদরের গোলচত্বরে জনসভা ও যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘এটাকে যোগদান বলে না, এটাকে বলে একটা ব্যর্থ রাজার ব্যর্থ নীতি। যিনি ভাঙ্গার মতো জায়গায় আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পেয়েও সব কিছু হারিয়ে ফেলেছেন। এই ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন নৌকা অধ্যুষিত এলাকা। নির্বাচনের মাত্র ৪৫ দিন বাকি, ব্যর্থ নেতার সঙ্গে ৪৫ জন নেতাও নাই। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠক করেন। কারণ হলো চাচা (জাফর উল্লাহ) পকেট থেকে টাকা বের করবে না। মইরা যাবে, মাল বের হবে না।’
তিনি বলেন, ‘চাচা দুই দুই বার লাল কার্ড পাইছেন, তার থেকেও লজ্জিত হইছেন গত ১০ তারিখের প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় তিন উপজেলা থেকে তিনশো লোক আনতে পারেন নাই। আর যে তিনশো লোক আনছেন, তারা লজ্জিত হয়ে পালিয়ে গেছেন। তাই ১০ তারিখের পর আপনার বুঝ আপনার বোঝা উচিত ছিল। যতদিন যাবে তত আপনার পাল্লা হালকা হতে হতে লাস্টে হারাধনের একাই থাকবেন। কারণ দাবা খেলা দেখছেন, অনেকেই দাবা খেলা জানেন। চেক দিতে দিতে সব পান, হাতি ঘোড়া খাওয়ার পরে লাস্টে রাজা থাকেন একলা। সেই রাজারে ষোলো চালে বান্ধ দিতে হয়। আমাদের ষোলো চাল শুরু হয়ে গেছে কাকা, যেকোনো এক চিপায় নিয়ে মাত করে দেব আপনাকে।’
নিক্সন বলেন, ‘সেদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতাদের সামনে আপনার চেহারাটা দেখার মতো ছিল। আপনার কোনো লোক সেদিন মাঠে ছিল না, কিন্তু প্রচণ্ড রোদের তাপ সহ্য করে হাজার হাজার হলুদ পাখি ছিল মাঠে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। ওই দিন তারা প্রমাণ করে দিছে নিক্সনরে কত ভালোবাসে এই
কাজী জাফর উল্লাহকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি তালমাতাল হয়ে গেছেন। আপনি মঞ্চে উঠে কী যে বলেন আমি তা বুঝি না। আপনি বলেন, নিক্সন তুমি ১১শ’ বিঘা জমির মালিক, অনুরোধ করবো চাচা সত্যি কথা বলবেন, ১১শ’ নয় দুই হাজার বিঘা জমির মালিক আমি। কারণ আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরে জন্মাইনি, আমার দাদা বাদশা খালাসি ছিল। এই ভাঙ্গার কোর্ট আমাদের জমিতে দেওয়া। আপনার মতো ফুড অফিসারের সন্তান হয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের খাদ্য সাপ্লাই দিয়া, সার কারখানার টাকা চুরি করে পানামার ব্যাংকে পাঠান, আমরা আপনার মতো দুর্নীতিবাজ না। অতএব জমির কথা বললে একটু বাড়িয়ে বইলেন, আমার ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে কন নিক্সন তোমার চিড়িয়াখানা আছে, হ আছে। শুক্রবার বা ছুটির দিনে মানুষ আমার বাড়ির চিড়িয়াখানায় পশু পাখি দেখতে যায়। এটা আমার আনন্দের ব্যাপার। আপনি ভয় পাইয়েন না, আপনি কেন ভয় পান, তা আমি জানি। একটা খাঁচা খালি আছে, তবে ওই খাঁচায় আমি কোনো বুইড়া গাধা পালবো না। অতএব আপনি ভয় পাইয়েন না।’
নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আপনিতো (জাফর উল্লাহ) আওয়ামী লীগ বানান আঙ্গুল দিয়া। তুমি আইছো তুমি সাংগঠনিক, তুমি জয়েন্ট সেক্রেটারি, মনে হয় আওয়ামী লীগটা আপনার বাবার। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র নাই, আওয়ামী লীগের সম্মেলন লাগে না, আওয়ামী লীগ করতে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পাস লাগে না। খালি আপনার মুখেই আওয়ামী লীগ হয়। আপনি একটা ভণ্ড, আপনি আওয়ামী লীগ যাদের বানান কলঙ্কিত, যারা আসল আওয়ামী লীগ তারা এই আজকের মঞ্চে। আপনি যুবলীগের প্রোগ্রাম করেন, আপনি মিথ্যাবাদী। যুবলীগের কমিটি গঠন এই তিন উপজেলায় স্থগিত করা হয়েছে। আপনি যুবলীগের কমিটি করতে পারেন না। এসব অপকর্মের জন্যই আপনার তলা খুলে গেছে।’
এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে তিন উপজেলায় গণজোয়ার বইছে। ইনশাল্লাহ বঙ্গবন্ধুর নৌকা, স্বাধীনতার নৌকা প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের চোখে দেখে গেছেন কাজী জাফরউল্লাহ একজন ব্যর্থ, অপদার্থ, ভণ্ড নেতা। তাই আগামীতে যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা দেন, তাহলে সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটে নৌকাকে এই আসন থেকে নির্বাচিত করবো। বাংলাদেশের মধ্যে এই তিন উপজেলায় সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব।’
তিনি বলেন, ‘কাজী সাহেব আপনি আমাদের মুরব্বী, আপনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, আপনি মঞ্চে মিথ্যাকথা বন্ধ করেন। আপনি মঞ্চে দুই একটা ছিনতাইকারী উঠাইয়া সম্মানিত ব্যক্তিদের নামে বাজে কথা বলেন। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ যেন না ভেঙে যায়, আমাদের ধৈর্য্যরে বাধ যদি ভাঙে তাহলে আপনার কাউলিবেড়ার বাড়ির সামনে গিয়ে আপনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। কারণ ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। ছোট ছোট টোকাই, ছিনতাইকারী, ইয়াবা খোরদের আপনি মঞ্চে বসান, মঞ্চে বসাইয়া আপনি যা ইচ্ছে তাই বলান। এই সম্মান ইজ্জত জনগণ আমাদের দিছে। সেই সম্মান ওই ছিনতাইকারীদের দিয়ে নষ্ট করা ঠিক না। আপনি গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন। আপনি করোনার সময় কই ছিলেন। আপনি আড়াই বছর আসেন নাই। আমার ভ্যানওয়ালা ভাইরা খাইছে, দোকানদাররা বাইচা আছে, গরিব মানুষের ঘরে চাল আছে, রোগীদের বাসায় ওষুধ আছে, আপনি একদিনের জন্যও আসেন নাই। আজকে সাড়ে চার বছর পর আইসা আপনি ভোট চান, আপনার লজ্জা করেনা। আপনি ছোট ছোট টোকাই দিয়ে বক্তব্য দেওয়ান, আমাদের গালিগালাজ পাড়ান। যারা আমাদের নিয়ে গালি দেয় তারা একবার বুঝে তাদের মুখ কতটুকু আর গালি কতটুকু। তাদেরকে বলি, এই জাফরউল্লাহ কিন্তু থাকবে না। এই জাফর উল্লাহকে কিন্তু খুঁজেও পাবেন না, ফোনেও পাবেন না। তিনি ফোন ধরবেন না, তখন কিন্তু চোখের পানি, নাকের পানি পায়ের ওপর পরে ভিজে যাবে, তখন কিন্তু জাফর উল্লাহকে পাবেন না। তাই গালি দেওয়ার আগে একটু হিসাব করে নিয়েন। দুই চারটা প্রতিবন্ধী আমার কাছ থেকে নিছেন, তাতে আপনি এত খুশি। আমার থার্ড ক্লাস অফিসার নিয়া আপনি ফাস্ট ক্লাস পোস্ট দেন। আবার প্রতিবন্ধী নিয়া সাংগঠনিক বানান। আপনার অবস্থা কি আপনি নিজেই বুঝেন।’
নিক্সন চৌধুরী বলেন, এই তিন উপজেলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজী জাফরউল্লাহকে হ্যাটট্রিক করে বিদায় দিবো। যারা ভদ্র রাজনীতি করেন, যাদের বদনাম নাই, যারা মানুষের জমি দখল করে না, যারা ডাকাতি করে না, তাদের কাছে আহ্বান রাখব, আওয়ামী লীগের সংগঠনকে যদি শক্তিশালী করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে হাত মেলান বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য, গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, পৌর মেয়র এ এফ এমডি রেজা, এনামুল হক প্রমুখ। উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ২৭ জন নেতাসহ দুই শতাধিক কর্মী নিক্সন চৌধুরীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তার সঙ্গে যোগ দেন।