
আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল এলাকায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে চরম অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রকল্পে বেকু দিয়ে সড়ক কেটে, মাটি এ সড়কেই ফেলা হয়েছে। যা প্রকল্প নিয়ম বর্হিভূত কাজ। এছাড়া এ সড়কের পাশের নাল ভূমি থেকে বেকু দিয়ে অপরিকল্পিত ও এলোপাতাড়িভাবে মাটি কেটে সড়ক মেরামতের কাজ করায়, এখন হুমকির মুখে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক। এতে এখানে জনদূর্ভোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দের অপচয়
করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকদের অভিযোগ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই সড়কের প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে চরম অনিয়ম ও গাফিলতির বিষয়টি। এ সড়কের বিভিন্ন অংশে পাশের নালা থেকে বেকু দিয়ে এলোপাতাড়ি মাটি কাটায় বর্ষা মৌসুমে সড়ক ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকটি অংশে দেখা গেছে সড়ক কেটে, মাটি এ সড়কেই ফেলা হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্প কাজে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,
সরকারি খরচে সড়ক মেরামতের নামে এই সড়কের ক্ষতি করে দিয়েছে তারা। সড়কের পাশের নালা ও কৃষি জমি থেকে বেকু দিয়ে এলোপাতাড়ি মাটি কেটে এ সড়কে ফেলা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে এ সড়ক ভেঙ্গে মাটি আবার সেই নাল জমিতেই পড়বে। এতে এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।সরাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পে অরুয়াইল-রাজাপুর সড়ক পুনঃনির্মাণ বাবদ কাবিখা কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ থেকে আট মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার প্রকল্প চেয়ারম্যান উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন
পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী ইউপি সদস্য মোছাঃ রাবেয়া বেগম। ইতিমধ্যে প্রকল্প চেয়ারম্যান বরাদ্দের ছয় মেট্টিক টন চাল উত্তোলন করেছেন। বাকি দুই মেট্টিক টন চাল উত্তোলন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউপি সদস্যা রাবেয়া বেগম এখানে নানা অনিয়ম-অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। বয়স্ক, বিধবা ও ভিজিডি কার্ড দেয়ার নামে এলাকার অনেকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মহিলা মেম্বার রাবেয়া
বেগম। তাছাড়া সরকারিভাবে ঘর তৈরী করে দেওয়ার নামে মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগম কয়কেজনের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়েছেন। অতীতে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অর্থ লুটপাট করেছেন। আর তার এসব অপকর্মের সামাল দিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। রাবেয়া বেগম ইউপি চেয়ারম্যানের খুব কাছের একজন প্রিয় মানুষ। এই মহিলা মেম্বারকে দিয়ে চেয়ারম্যান নানা বাণিজ্য করে আসছেন এখানে। ভূমি হস্তান্তর কর ১% এর বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ টাকা নানা ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে জায়েজ করছেন
চেয়ারম্যান। এসবের জোগান দিচ্ছেন মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগম।
এ বিষয়ে মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান, এই সড়কে এগারো হাজার টাকা চুক্তিতে বেকু দিয়ে মাত্র একদিন মাটি কাটা হয়েছে। সড়কের অন্যান্য কাজ শ্রমিক দিয়েই করানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা মজুরি হিসেবে শ্রমিকদের দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। বেকু দিয়ে সড়ক কাটা ও সড়কের পাশে বড় বড় গর্ত করা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে প্রকল্প চেয়ারম্যান
রাবেয়া বেগম জানান, কিছু দিন পর এখানে কয়েকটি জমি বালু দিয়ে ভরাট করবে স্থানীয় জমির মালিকেরা। তাদের সাথে কথা হয়েছে, তারা ওইসব গর্ত বালু দিয়ে ভরাট করে দিবেন। এ পর্যন্ত ছয় মেট্টিক টন চাল উত্তোলন করেছি। এই প্রকল্পে সর্বমোট কতজন শ্রমিক ও কত টাকার কাজ এই পর্যন্ত সড়কে করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া বেগম বলেন, সত্যি বলতে আমি এই প্রকল্পে কাগুজে-কলমে সভাপতি। সবকিছু করছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জাতীয়পার্টির নেতা দুলাল মিয়া ও আবদুর রউফ। তারা টাকা পয়সা খরচ
করে এই সড়কে কাবিখা প্রকল্প এনেছে, তারাই সবকিছু করছে। আমি তাদের কথামতো বিভিন্ন কাগুজে স্বাক্ষর দিয়ে যাচ্ছি মাত্র। বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে, মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগম জানান, এসব সত্য নয়। চেয়ারম্যানের সাথে আমার একটু সম্পর্ক ভালো, তাই অনেকে সংক্ষুব্ধ হয়ে এসব বলছে।এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, কাবিখা
প্রকল্পে বেকু দিয়ে সড়কে মাটি কাটার কোনো নিয়ম নেই। যদি প্রকল্প চেয়ারম্যান এই কাজটি করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে ছয় মেট্টিক টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে। বাকি চাল উত্তোলন করতে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমি সরেজমিনে ওই প্রকল্পে যাবো।