নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলচিপা(পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর গলাচিপায় অতিরিক্ত বৃষ্টিতে তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি সত্ত্বেও বিগত বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলনের কারণে লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করছে তরমুজ চাষিরা। এছাড়া ১৫ একর জমিতে হাইব্রিড জাতীয় বিভিন্ন রঙের ও জাতের তরমুজ চাষ করে উপজেলায় সাড়া ফেলে দিয়েছে ব্যতিক্রমী কৃষক আল আমিন। তাঁর ক্ষেতের তরমুজের
কোনোটার ভেতর লাল, কোনোটা হলুদ বা কমলা রঙের। স্বাদও মিষ্টি। ফলনও হয়েছে বেশি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, গলাচিপা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজের ফলন হয়েছে। আরো ১৫ দিন আগেই তরমুজ বাজারে আসার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দেরিতে হলেও এ এলাকায় ইতিমধ্যে নানা প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল
(উফশী) তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা-বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন চালান হচ্ছে হাজার হাজার তরমুজ। এবার এখন পর্যন্ত বাজার বেশ চড়া। চাষিরাও লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, এবার উপজেলায় তরমুজ উৎপাদন পাঁচ হাজার টন ছাড়িয়ে যেতে পারত। তা টাকার অঙ্কে অন্তত
৮০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। আশাব্যঞ্জক উৎপাদন ও মূল্যের কারণে কৃষকরা বেশ খুশি ছিল। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এবার গলাচিপা উপজেলায় মোট সাত হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
উপজেলার আমখোলা, গোলখালী, ডাকুয়া, মুরাদনগর, ইটবাড়িয়া, পানপট্টি, রতনদি তালতলী, চিকনিকান্দিসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই তরমুজের ক্ষেত। আবার কিছু ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। প্রায় সবাই তরমুজ কাটা আর মহাজনের হাতে তুলে দেওয়াসহ ক্ষেত পরিচর্যায় কীটনাশক ও সেচ দিতে ব্যস্ত। আবার কিছু ক্ষেত
নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এসব কিছুর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার এবং মহাজনরা তরমুজের গ্রামগুলোতে এসেছেন। গোলখালী ইউনিয়নের কৃষক জহিরুল খান জানান, তিনি এবার সাত একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের চাষ করতে গিয়ে মোট পাঁচ লাখ টাকার
ওপর খরচ হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে আট-নয় লাখ টাকা লাভ করবেন। কিন্তু এখন দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা হয়তো লাভ থাকতে পারে। এদিকে গলাচিপা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিবাগ এলাকার যুবক আল আমিন। তিনি বীজ ব্যবসায়ী ও কৃষক। পৌর এলাকার বঙ্গবন্ধু উপশহরের রামনাবাদ
নদীর তীরে তিনি এবার ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তাঁর ক্ষেতে বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষিদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, আল আমিন ১৫ একরে হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। এগুলোর অনেকটার ভেতরটা হলুদ, লাল ও কমলা রঙের হয়। খেতেও খুব মিষ্টি। এ ব্যাপারে চাষি আল আমিন বলেন,
গত বছর হাইব্রিড জাতের এ তরমুজের বীজ দেখে প্রথমে আমি এক একর জমিতে চাষ করি। বিক্রি ভালো হয়েছে। এবার ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। অসময়ে বৃষ্টির কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়েছে। এর পরও আমার লাভ হবে এবং আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই ক্ষেতের তরমুজ বাজারজাত করতে পারব। আবহাওয়া ও
পারিপার্শ্বিক অবস্থা যদি অনুকূলে থাকে তাহলে হাইব্রিড এ তরমুজ চাষে এবার কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকার ওপর লাভ করতে পারবেন বলে জানান। গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, সামনে আর কোনো ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে গলাচিপায় যে তরমুজ এখনো ভালো আছে, তাতেও কৃষকরা লাভবান হবে। ধানের
পরে যে কয়েকটি ফসল এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে লাভজনক হয়ে উঠেছে তার মধ্যে তরমুজ ইতিমধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা আরো লাভবান হতে পারবে বলেও মনে করেন তিনি।