নিজস্ব প্রতিবেদক
২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল এ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে পথে বসেছেন এক লক্ষেরও বেশি বিনিয়োগকারী এটা পড়তে বসা বিনিয়োগকারীরা বলছেন সরকারের সু নজর না থাকায় বেপরোয়া হয়ে গেছে শেয়ার বাজার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে গত ৫ বছরে লাখো বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ টাকার শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ২ টাকায়। ফলে হাওয়ায় মিশে গেছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। এর মধ্যে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তারা পুঁজি একদিকে হারিয়েছেন অন্যদিকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে ঋণগ্রস্ত। শুধু ব্যক্তিই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও রয়েছে এ সমস্যায়।সমাজের বিত্তশালী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন
বিত্তশালীদের কোন সমস্যা না হলে ও মধ্যবিত্তদের পথে বসতে হয় এসব বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ইক্যুইটি নেতিবাচক। আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আপাতত কোনো সুখবর নেই। ফলে আর্থিক সংকটে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে প্রতিনিয়ত জনবল ছাঁটাই হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ হওয়ার পথে। সব মিলে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংকটে শেয়ারবাজার।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সমস্যার জন্য দায়ী বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। উত্তরণের পথ হল সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে দায়ীদের বিচার করতে হবে। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,
শেয়ারবাজারের সংকট একদিনের নয়। অনেকদিন থেকে চলে আসছে।তিনি বলেন, যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক, মূল সমস্যা হল এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।তিনি এ সময় আরও বলেন শেয়ার বাজারের প্রতি সরকারের কোন নজর না থাকায় এই ধরনের বেপরোয়া হয়ে গেছে শেয়ার বাজার অর্থাৎ অনিয়মে জড়িতদের বিচার করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে- কারসাজির মাধ্যমে কেউ পুঁজি হাতিয়ে নিলে তার বিচার হবে। এছাড়া দুর্বল শেয়ারের তালিকাভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। গত কয়েক বছরে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, এমন ৫০টি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর
মধ্যে এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার শেয়ারের মূল্য তালিকাভুক্তির পর প্রথম দিনে যা ছিল, মঙ্গলবার তা ২৫ ভাগের একভাগে নেমে এসেছে। ২০১৩ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হয় ফ্যামিলি টেক্সটাইল। লেনদেন শুরুর দিন প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ দাম ছিল ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা। মঙ্গলবার তা ২ দশমিক ৮ টাকায় নেমে এসেছে। ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত হয় সিএনএ টেক্সটাইল। শুরুর দিন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ২২ টাকা। মঙ্গলবার তা ২ টাকায় নেমে এসেছে।একইভাবে পদ্মা লাইফ ১৬৩ টাকা থেকে ২২ টাকায়, দেশবন্ধু পলিমার ৭৪ টাকা থেকে ১২
টাকায়, সলভো কেমিক্যাল ৬৯ থেকে ১৪ টাকায়, ফার কেমিক্যাল ৫৩ থেকে ৯ টাকায়, মোজাফফর স্পিনিং ৪৬ থেকে ১০ টাকা, সাইফ পাওয়ার ৭২-১৬ টাকা, ন্যাশনাল ফিড ৪৩-১০ টাকা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ৬৩-১৫, এমারেল্ড অয়েল ৫০-৯, ওয়াইমেক্স ১১২-২৮, সেন্ট্রাল ফার্মা ৩৮-১০, আর্গন ডেনিম ৮২-২৩, জিএসপি ফাইন্যান্স ৫৩ থেকে ১৫, ফারইস্ট নিটিং ৪৬-১৫, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৮৩-২৫, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ৩৮-১২, হামিদ ফেব্রিকস ৫৭-১৯, আরডি ফুড ৩৮-১২, আমরা নেটওয়ার্ক ১৩৯-৪৮, ইয়াকিন পলিমার ৩২-১০, গ্লোবাল হেভিকেমিক্যাল ১০০-৩৭, বারাকা পাওয়ার ৭৩-২৬, গোল্ডেন হারভেস্ট ৭৭-২৯, আমান ফিড ৯৯-৪০, ওরিয়ন ফার্মা ৭৫-৩১, এএফসি এগ্রোকেমিক্যাল ৬৫-২৮,
ইন্ট্রাকো রিফিউলিং স্টেশন ৪৬-২১, বেঙ্গল উইনসোর ৫৫-২৩, জিপিএইচ ইস্পাত ৭৩-৩৩, আমান কটন ৭৫-৩২, এমআই সিমেন্ট ১৩৩-৬০, এসএস স্টিল ৫১-৩২, ইন্দোবাংলা ফার্মা ৪৫-২২, বসুন্ধরা পেপার মিল ১৩১-৬৪, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ৩৬-১৮, এনভয় টেক্সটাইল ৬২-৩১, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম ৪৮-২৬, আরএসআরএম স্টিল ৭৮-৪১, প্যাসেফিক ডেনিম ২৭-১৪, ইভিন্স টেক্সটাইল ২২-১১ এবং নাহি অ্যালুমিয়ামের শেয়ারের দাম ৮২ থেকে ৪৮ টাকায় নেমে এসেছে। পতনের কারণ : সামগ্রিক বিবেচনায় দেখা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার মৌলভিত্তি উপেক্ষা করে অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারে এসেছিল।কোম্পানিগুলো ইস্যু ম্যানেজারকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে আসে। বাজার থেকে বেশি টাকা নেয়ার
জন্য শুরুতে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে। এরপর মূলধন বাড়িয়ে বাজার থেকে বেশি টাকা নেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেয়া হয় মাত্রাতিরিক্ত প্রিমিয়াম। নিয়ম অনুসারে তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্টের শেয়ারে এক বছরে লকইন (বিক্রি নিষিদ্ধ) দেয়া থাকে। এই সময়ের মধ্যে প্লেসমেন্টের শেয়ার বিক্রি করা যায় না।কিন্তু এক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজার সাধারণত কিছু ব্রোকারেজের সঙ্গে চুক্তি করে, অন্তত এক বছর শেয়ারটির দাম ধরে রাখতে হবে। এরপর লকইনের সময় শেষে শেয়ার ফ্রি হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সিন্ডিকেট কেটে পড়ে। এভাবে দুর্বল কোম্পানির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নেতিবাচক অবস্থা শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট দূরত্বের প্রভাব পড়েছে বাজারে। এসব কারণে সক্রিয় ১৩ লাখ বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে বর্তমানে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট নেতিবাচক। এসব বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব।মঙ্গলবারের বাজার চিত্র : এদিকে একক দিন হিসেবে ডিএসইতে মঙ্গলবার ৩৫১টি কোম্পানির ১২ কোটি ৭৭ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৩১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩২৭টি কোম্পানির, কমেছে ১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টি কোম্পানির শেয়ার।ডিএসইর ব্রড সূচক মঙ্গলবার আগের দিনের চেয়ে ১১১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ৩৮
দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮১৪ দশমিক ৬২ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৫ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৪ দশমিক ৭২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইর বাজারমূলধন ৩ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলেন শেয়ারবাজারে এমন দস নেমে আসলে শেয়ার বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন লাখো লাখো বিনিয়োগকারীরা তাই সরকার এখন যদি শেয়ার বাজারের প্রতি নজর না দেয় আগামীতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার মতো কেউ থাকবে না তাই যত দ্রুত সম্ভব শেয়ার বাজারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে বিনিয়োগকারীদের