
ঢাকায় ঢুকতে পারবে না দূরপাল্লার বাস নগরীর তীব্র যানজট নিরসনে সরকারের বহুপাক্ষিক উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যমান ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।সোমবার (১৫ নভেম্বর) ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস নগর ভবনে তার কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা জানান।
যানজট নিরসনে ডিএসসিসি’র গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- নৌ রুট পুনরুদ্ধার, নতুন সড়ক নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ৫৩টি চৌরাস্তা প্রশস্তকরণ, অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, বাস রুট রেশনালাইজেশন, রাস্তার অবৈধ দখলদারদের অপসারণ,পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্থান নিশ্চিতকরণ, আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ।
তাপস বলেন, ‘রাজধানীর যানজট কমাতে আমরা সরকার ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি।’মেয়র বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নগরীর উপর যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকার প্রবেশপথে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও বাস ডিপো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো নির্মিত হওয়ার পর কোনো দূরপাল্লার বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া এবং সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরে চারটি বাস টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। একবার টার্মিনালগুলো তৈরি হয়ে গেলে আন্তঃজেলা বাসগুলোকে রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না, যা উল্লেখযোগ্যভাবে যানজট কমাতে সাহায্য করবে।’
ব্যারিস্টার তাপস জানান, তারা কালুনগর থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত ৬ লেনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।বাম লেন প্রশস্ত করে এবং বিদ্যমান ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ৫৩টি চৌরাস্তা উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছেন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেট অফ থিংস ট্রাফিক সিস্টেম বাস্তবায়ন করছি।’
তিনি জানান, ডিএসসিসি রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে রাজধানীর আশেপাশের নৌ-রুটগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে এগুলোকে চলাচলের উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডকে ঘিরে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে।ব্যারিস্টার তাপস জানান, প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের খাল-নদীর পাশে ৪ লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মেয়র জানান, স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে হেঁটে যাওয়া লোকেদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তারা হাঁটার উপযোগী করে ফুটপাথগুলো প্রশস্ত করবেন।তিনি জানান, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে তিনটি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোকে নতুন করে সাজাতে ৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোতে অবৈধ দখলও নগরীর যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকায় ঢুকতে পারবে না দূরপাল্লার বাস আমরা যেকোনো উপায়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব।মেয়র বলেন, শহরের রাস্তায় রিকশা, ভ্যান গাড়ির মতো প্রায় ৭ লাখ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে যা যান্ত্রিক যানবাহনের পাশাপাশি শহরের যানজট সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।তিনি বলেন, আমরা ৩৪ বছর পর অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন ও তাদের লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।
এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে এবং তাদের ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেয়া হয়েছে।
ডিজিটাল নম্বর প্লেট ছাড়া কোনো অযান্ত্রিক যানবাহনকে নগরীর রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশনের এখতিয়ারে রূপান্তরিত অযান্ত্রিক যানবাহন চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য তারা শিগগিরই কাজ শুরু করবেন।
মেয়র জানান, তারা যানবাহনের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং স্থান নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন যা শহরের যানজট কমাতেও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।তিনি বলেন, ‘নগরীর প্রধান সড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়। সেই গাড়িগুলোর পৃথক পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছি এবং কাউকে অনির্ধারিত জায়গায় তাদের গাড়ি পার্ক করার অনুমতি দেয়া হবে না।’
মেয়র বলেন, সার্বিক সড়ক ব্যবস্থাপনায় রদবদল করতে ডিএসসিসির নেওয়া সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা তারা পর্যালোচনা করছেন।তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনার অধীনে কিছু রাস্তা শুধুমাত্র হাঁটার জন্য ঠিক করা হবে এবং কিছু রাস্তা একমুখী ও দ্বিমুখী করে যানবাহন চলাচলের জন্য এবং যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য আলাদা লেন নির্ধারণ করা হবে।