
ছাতক প্রতিনিধি:
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানি থৈ থৈ করছে বাড়ির চারপাশে। কারও কারও ঘরেও প্রবেশ করেছে তা। এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়ার জো নেই বাসিন্দাদের। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়েই পানিবন্দি অবস্থায় এসব মানুষের দিন-রাত কাটছে। দুর্ভোগের শেষ নেই তাদের। পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত ত্রাণও। রয়েছে খাবার পানির সংকট। অনেকেই ঢলের পানি দিয়ে রান্না ও থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করছেন।দুর্ভোগের এই চিত্র সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বিভিন্ন এলাকার। এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
রয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতকে পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ওইসব উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। আর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ভুইগাঁও গ্রামের খাছা বিবি জানান, পাঁচ দিন আগে তাদের ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে। সেই থেকে চুলায় আগুন জ্বালাতে পারছেন না। দোকান থেকে শুকনো খাবার
কিনে এনে রাখা ছিল সামান্য। অল্প অল্প করে তাই খাচ্ছেন।গোবিন্দনগর গ্রামের সদরুল আমিন সুহান ও নগর করিম জানান আমাদের এখন শুকনো খাবার প্রয়োজন। ঘরে চাল থাকলেও রান্না করার কোনও ব্যবস্থা নেই।দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ভুইগাঁও গ্রামের ওলিউর রহমান বলেন, মানুষ তো কোনও রকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছে। কিন্তু গবাদিপশু, হাঁসমুরগি নিয়ে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। প্রতিটি গোয়ালায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে গবাদিপশুকে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিতে হচ্ছে।দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের
সাবেক মেম্বার মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু সবাই তা পাচ্ছে না। ত্রাণের পরিমাণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও ওষুধ বেশি দরকার।কৈতক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোজাহারুল ইসলাম বলেন-বন্যার সময় রোগমুক্ত থাকতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পান করতে হবে। মাথা পর্যন্ত ডুবে থাকা টিউবওয়েলে পানি ব্যবহার করা যাবে না। সাপের কামড় থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া ছোট ছোট শিশুদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময়
ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় খাবারদাবারে সতর্ক থাকতে হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি ৮ দশমিক ৪ থেকে ৮ দশমিক ৬-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। পানি এখন স্থির অবস্থায় রয়েছে। আগামী কয়েক দিন আরও বৃষ্টি হবে ও পাহাড়ি ঢল নামবে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে।’জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ৩০০ টন চাল, তিন হাজার ৭৬৫ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ
করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় নগদ ১০ লাখ টাকা, ৩০০ টন চাল ও চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছে। প্রতি প্যাকেট শুকনো খাবারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনিসহ সাড়ে ১৬ কেজি সামগ্রী থাকে। তবে এবার খাবারের প্যাকেটে মোমবাতি ও দেশলাই নেই। তিনি আরও জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা চাল বিতরণ করছে। প্রয়োজন হলে ত্রাণের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।