জগৎ চলে নিয়মের মধ্যেই; সে নিয়মগুলোর ভেতর একটি হলো প্রবল অত্যাচার করবে দুর্বলের ওপর, অপরটি এ রকমের যে, প্রকৃতি শূন্যতা সহ্য করে না এবং শূন্যস্থান সে দ্রুতগতিতে পূরণ করে ফেলে। এ দুই সাধারণ নিয়ম সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও নির্ভুলভাবে কাজ করে।
আমাদের সংস্কৃতি সব সময়েই ঝুঁকির ভেতর ছিল এবং আছে। থাকার কারণটা বেশ পরিষ্কারভাবেই নিহিত রয়েছে ওই দুই কারণের মধ্যে। আমাদের সংস্কৃতি দুর্বল এবং সেখানে একটা শূন্যতা রয়েছে। এ দুই সত্য মোটেই পরস্পরবিরোধী নয়, তারা একে অপরের পরিপূরক বটে।
তা সংস্কৃতির শক্তিটা কোথায় থাকে? থাকে তার চর্চার ভেতরেই। আমরা তো অবশ্যই জানি, সংস্কৃতি কোথায় আছে, কেমনভাবে রয়েছে। থাকে সে আমাদের জীবনযাপন এবং সামাজিক সম্পর্কের ভেতরেই; এর বাইরে অন্য কোনো অদৃশ্য স্থানে গিয়ে সে যে টিকে থাকবে এমনটি মোটেই সম্ভবপর নয়। কিন্তু মূর্ত প্রকাশের অভ্যন্তরেও তো বস্তু থাকে। সেটা হলো মতাদর্শ, নামান্তরে দার্শনিকতা।
যেমন ধরা যাক আমরা সবাই বলি আমাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে সামন্তবাদের উপস্থিতি। কথাটা মিথ্যা নয়। দীর্ঘকালের পরাধীনতা, দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য, গ্রাম্যবিচ্ছিন্নতা, এসব উৎপাত আমাদের পশ্চাৎপদ করে রেখেছে। আমরা আধুনিক হতে পারিনি। প্রথার প্রতি অনুগত থেকেছি, বীর খুঁজে হয়রান হয়েছি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির যে বৈশিষ্ট্য, মানুষে মানুষে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার সম্পর্কে, সেটা গড়ে তুলতে পারিনি। সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের গ্রাম্যতা বড়ই প্রত্যক্ষ, যাকে সামন্তবাদী বলাটা অযথার্থ নয়। ওই গ্রাম্যতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে ‘আধুনিক’ হতে। আধুনিকতা সর্বদাই শক্তিশালী, তাই আমরা আমাদের পশ্চাৎপদতার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে প্রবহমান যে আধুনিকতা তাকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি।
কিন্তু এ আধুনিকতাটা আসলে কী? সেটিকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে গেলে বলতে হবে এ হচ্ছে পুঁজিবাদী সম্পর্ক ও ধ্যান-ধারণা। পুঁজিবাদই আসল; ব্রিটিশের শাসনের সময়েও পুঁজিবাদ বিদ্যমান ছিল, এখন তা আরও শক্তিশালী। ওটি ছিল উপনিবেশিক শাসনের কাল।
সেই শাসনের অবসানে এসেছিল নব্য উপনিবেশিকতা। আর এখন দেখা দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, যার একটি পরিচয় হচ্ছে তথাকথিত বিশ্বায়ন। ভেতরের ব্যাপারটা একই। পুঁজিবাদের অর্থনীতি ও মতাদর্শ। আধুনিক হতে গিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক হইনি, পুঁজিবাদী হয়েছি। আর এটা তো স্বীকৃত সত্য যে, পুঁজিবাদী বিশ্ব নিজেকে যতই গণতান্ত্রিক বলুক না কেন, ভেতরে এবং বাইরেও সে ফ্যাসিবাদী। পুঁজিবাদী বিশ্বে প্রবল দুর্বলকে নিরন্তর শোষণ করে, দুর্বলকে কখনোই স্বাধীন হতে দেয় না। আমরা পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভেতরেই আছি এবং পুঁজিবাদী আদর্শের যে দুই স্তম্ভ, আত্মকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদিতা, তাদের মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। সামন্তবাদে যেমন, পুঁজিবাদেও তেমনি, প্রবল অত্যাচার করে দুর্বলের ওপর।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে আগ্রাসন চলছে সে বিষয়ে আমরা মোটামুটি অবহিত। বলা চলে বিলক্ষণ ভুক্তভোগী। বিদেশি সংস্কৃতির কৃত্রিমতা, স্থূলতা, অশ্লীলতা আমাদের ওপর আছড়ে পড়ছে। ঘরে-বাইরে আজ আমরা বিপন্ন। আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে, আমরা উৎপাটিত, কৃত্রিম, পরস্পরবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। আমাদের জন্য দাঁড়ানোর তেমন কোনো জায়গাজমিন অবশিষ্ট নেই।
সবই সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতিকার কী? কীভাবে আমরা বাঁচাব আমাদের সংস্কৃতিকে, আত্মপরিচয়, মর্যাদা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মানবিক দিকগুলোকে? এগোবই বা কোন পথে?
এ প্রশ্নের জবাবটা কিন্তু ওই যে দুই নিয়ম, প্রবলের অত্যাচার এবং শূন্যতার পূরণ, তাদের দিকে তাকালেই পেয়ে যাব। আর সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারব আমাদের জন্য করণীয় কাজটি কী। করণীয় কাজ অন্যকিছুই নয়, সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা এবং শূন্যতা যাতে না থাকে সেটি দেখা।
এর জন্য চাই নিজস্ব সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা। কিন্তু জিজ্ঞাসা তো ওইখানেও রয়ে যায়, রয়ে যাবে। কোন নিজস্বতাকে আমরা বিকশিত করব এবং কীভাবে? কীভাবে বিকশিত করব সে ব্যাপারটাই প্রথমে দেখা যাক। আমরা বলব শিক্ষা চাই। সব মানুষকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া চাই; কিন্তু সে শিক্ষার মাধ্যমটা কী হবে? মাধ্যম হওয়া চাই মাতৃভাষা, কেননা মাতৃভাষাকে মাধ্যম না করলে শিক্ষা কখনোই স্বাভাবিক, গভীর ও স্থায়ী হয় না। কৃত্রিম, অগভীর ও অস্থায়ী রয়ে যায়। চর্চার এ কাজটা সহজ নয়। বইপত্রের অভাব রয়েছে; আগ্রহের অভাব অবশ্য আরও মারাত্মক। কিন্তু মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষারব্যবস্থা করতে পারলেই যে সবকিছু পাওয়া হয়ে গেল তাতো নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে পাওয়া একটা বড় পাওয়া অবশ্যই, সংস্কৃতি তাতে যে শক্তিশালী হবে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন ধরনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেটা তো না দেখলে চলবে না।
এখন যে শিক্ষাব্যবস্থা দেশে বিদ্যমান তার মস্ত মস্ত গলদগুলোর একটি হলো এই যে, এতে পুঁজিবাদী মানুষ তৈরি হচ্ছে, যথার্থ মানুষ তৈরি হওয়ার পরিবর্তে। পুঁজিবাদী মানুষ হচ্ছে আত্মস্বার্থসচেতন, সমাজবিচ্ছিন্ন, স্বার্থপর, ভোগবাদী মানুষ। তাকে ‘মানুষ’ বলা ঠিক কিনা সেটাই একটা সন্দেহ। মতাদর্শের প্রশ্নটা তাই খুবই জরুরি। আমরা সামাজিক মানুষ চাই, স্বার্থপর মানুষ নয়। সংস্কৃতিচর্চার একবারে কেন্দ্রভূমিতে রাখা চাই এ দার্শনিক বিবেচনা; সংস্কৃতি কখনোই আদর্শ-নিরপেক্ষ হতে পারে না। সংস্কৃতিচর্চা বিনোদন সরবরাহ করবে, মানুষকে সামাজিক করবে, রুচিকে করবে উন্নত, চিন্তাকে দেবে গভীরতা; কিন্তু দেখতে হবে সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে কোন ধরনের চেতনা বিকশিত হচ্ছে। নৌকার জন্য যেমন হাল দরকার, সংস্কৃতির তেমনি প্রয়োজন মতাদর্শ। আর আমাদের ক্ষেত্রে সেই মতাদর্শটি হবে গণতান্ত্রিক, অর্থাৎ পুঁজিবাদবিরোধী। কেননা পুঁজিবাদের আগ্রাসনে আমরা পীড়িত ও বিপন্ন।
আমাদের পাড়ায় পাড়ায় গ্রন্থাগার দরকার। ঘরে ঘরে চাই বই পড়ার অভ্যাস। কিন্তু কেবল বই পড়লেই তো হবে না, দেখতে হবে কোন ধরনের বই পড়া হচ্ছে। কেননা সব বই সমান মাপের নয়, সমানভাবে উপকারী নয়। বই আমাদের জ্ঞান দেয়; কিন্তু কোনটা জ্ঞান, কোনটা নয়, কোনটা গ্রহণযোগ্য আর কোনটা বর্জনীয়, সেই বোধটাও তো দরকার। এ বোধ কেবল যে বই পড়ে তৈরি হবে তা নয়, একে কার্যকর করার জন্য বাইরে থেকে সহায়তা আবশ্যক হয়, যেটা আসতে পারে শিক্ষক, অভিভাবক, গ্রন্থাগারিক এবং সর্বোপরি সংস্কৃতির ভেতর থেকেই।
আমরা গান চাই। নতুন নতুন গান, যে গান আনন্দ দেবে আর সচেতনও করবে। একক গান, সমবেতকণ্ঠে গান, মিছিলের গান, জনসভার গান, সব ধরনের গান দরকার। এ গান কেবল যে তৃপ্ত করবে তা-ই নয়, সজাগও করে তুলবে। গুন গুন করে গাওয়া হবে, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ এসে যোগ দেবে। কণ্ঠ মেলাবে।
দরকার নাটক। যে নাটক সমাজ, ইতিহাস ও বিশ্বের দ্বন্দ্বগুলোকে মূর্ত করে তুলবে। সে নাটক মানুষকে দিনানুগতিকতার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিয়ে বড় একটা জগতে নিয়ে যাবে। মানুষ নিজের অজান্তেই নিজের চেয়ে বড় হয়ে উঠবে। আমাদের দরকার কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান। বক্তৃতা ও বিতর্কের প্রয়োজন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চাইব পাড়ায় পাড়ায়। চাইব নানা ধরনের মেলা। আর দরকার চলচ্চিত্রের। চলচ্চিত্র যে কত শক্তিশালী মাধ্যম তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। তারচেয়েও শক্তিধর বোধকরি টেলিভিশন। এ মাধ্যমটিরও যথোপযুক্ত ব্যবহার চাই, যেমন চাই রেডিও-এর ব্যবহার। আমরা সংবাদপত্র এবং পত্রপত্রিকাকে কাজে লাগাতে চাইব সংস্কৃতিকে পুষ্ট করার কাজে।
মূল কথাটা হলো, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতা আবশ্যক। যাতে করে দুর্বলতা না থাকে এবং শূন্যতা ঘুচে যায়। কেবল পরিমাণে বড় হলে চলবে না, বড় হতে হবে গুণগতভাবেও। আর সেই গুণটা যেমন রুচির, তেমনি মতাদর্শের। শূন্যতা যদি ঘোচাতে চাই তাহলে তার উপায় হচ্ছে মতাদর্শকে গভীর করা। মতাদর্শ নিশ্চয়ই স্থূলভাবে থাকবে না, কোনো এক জায়গাতেও স্থবির হয়ে পড়বে না, তাকে পরিব্যাপ্ত হতে হবে সৃষ্টির সমগ্র ক্ষেত্রে। তবে সংস্কৃতিচিন্তার কেন্দ্রেও সে উপস্থিত থাকবে, থাকবে একটি স্বপ্নের আকারে। আমরা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে মিলিত হব, দুঃস্বপ্নের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হব না। এখন যেটা সত্য, সেটা তো হলো দুঃস্বপ্নের বিচ্ছিন্নতা। আর এর কারণ হলো পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন। আমরা প্রতিরোধের কথা বলছি। এ প্রতিরোধ যে কেবল বর্জনের তা নয়, এটি বর্জনের সঙ্গে গ্রহণেরও। আমরা পুঁজিবাদের বর্জ্যগুলোকে বর্জন করব, কিন্তু গ্রহণ করব তার অর্জনগুলোকে। পুঁজিবাদ একদা যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল আজ তা নেই। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার অবদানগুলো মোটেই সামান্য নয়। আমরা সেগুলো নেব, কিন্তু তাদের বৈষম্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতে দেব না। চাইব তাদের ব্যবহার। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চেয়েও বেশি জরুরি হয়ে রইবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। সেটা গ্রহণ করা চাই। আমরা নির্বিচারে গ্রহণ-বর্জন করব না; কাজটা চলবে সুবিবেচনা ও বিজ্ঞতার সঙ্গে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের জন্য, যা প্রয়োজনীয় তাই হবে গ্রহণযোগ্য, তার বিপরীতে যেগুলোকে মনে হবে ক্ষতিকর তাদের অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে, তা দেখতে সেগুলো যতই দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর হোক না কেন।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গ্রহণের বিষয়টি সামান্য নয়, বরঞ্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলো ও বাতাস না পেলে সংস্কৃতি বিকশিত হবে না। শুকিয়ে মারা পড়বে। আমরা উদার হাতে গ্রহণ করব, সমৃদ্ধ হব; কিন্তু সব গ্রহণই হবে সুস্থ অর্থাৎ গণতান্ত্রিক বিকাশের প্রয়োজনে। এ জায়গায় এসে আমরা আন্তর্জাতিক হব; পুঁজিবাদী না হয়ে। পুঁজিবাদ আর আন্তর্জাতিকতা অভিন্ন বস্তু নয়, বরঞ্চ তারা পরস্পরবিরোধী। পুঁজিবাদ বিশ্বাস করে লুণ্ঠনে, আন্তর্জাতিকতার নির্ভর সহযোগিতার ওপর। পুঁজিবাদবিরোধী লড়াইটা সব সময়েই আন্তর্জাতিক ছিল, আজকেও তেমনই রয়েছে। এখন যখন পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে, তখন আন্তর্জাতিক হওয়ার আবশ্যকতাটা বৃদ্ধি পেয়েছে বৈকি। দেশে-দেশে পুঁজিবাদবিরোধী যে সংগ্রামটা চলছে আমরাও তার অংশীদার হব। একাধারে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ওই সংগ্রামের জন্য রচিত সাহিত্য এবং সংগ্রাম থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য মূল্যবান সম্পদ হবে বৈকি। পুঁজিবাদ যতই আধুনিক সাজে সজ্জিত হোক, প্রকৃত আধুনিকতা সেখানে নেই, যেটা রয়েছে আন্তর্জাতিকতাতে।
যাকে প্রতিরোধ বলছি, সেটা আসলে সৃষ্টিশীলতা। সৃষ্টি দিয়েই অনাসৃষ্টিকে প্রতিহত করতে হবে। এক কথায়, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা যতটা সৃষ্টিশীল হব, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ততটাই শক্তিশালী হবে। কিন্তু সৃষ্টির ক্ষেত্রে মতাদর্শের কথাটা যেন কিছুতেই না ভুলি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই পারবে সমষ্টিগত স্বপ্নের সাহায্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে, আমাদের সামাজিক ও সংস্কৃতিবান করে তুলতে। সামাজিক ও সংস্কৃতিবান হওয়া কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ব্যাপার নয়, সামাজিক মানুষের পক্ষেই কেবল যথার্থ অর্থে সংস্কৃতিবান হওয়া সম্ভব এবং যথার্থ সংস্কৃতিবান যারা তারা সামাজিক না হয়ে পারেন না। উভয়ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হৃদয়বান হওয়া, যে হৃদয় বৃদ্ধির প্রতিপক্ষ নয়, সহযোগী বটে।
কিন্তু এই যে সাংস্কৃতিক সৃষ্টিশীলতার কথা বলছি, সেটা তো একা একা, বিচ্ছিন্নভাবে করা সম্ভব নয়; তার জন্য সমবেত উদ্যোগ ও কর্মোদ্যম আবশ্যক। সমবেত হওয়ার জন্য সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র গড়ে তোলা চাই। কোনো এক জায়গাতে নয়, দেশের সর্বত্র। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লাতে মহল্লাতে। ঘরে ঘরে।
আমাদের সংস্কৃতির নিজস্বতাটা কোথায়, তারও তো মীমাংসা প্রয়োজন। নিজস্বতা প্রথমত ভাষায়। দ্বিতীয় নিজস্বতা প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কে। আমাদের দেশ নদীমাতৃক। নদীর যে প্রবহমানতা, উর্বরতা বৃদ্ধিতে তার যে ভূমিকা এবং নদীর ভেতরে থাকে যে মায়া-মমতা, এরাও উপস্থিত আমাদের সংস্কৃতিতে। ওই দুই নিজস্বতাকে বিকশিত করার গণতান্ত্রিকতাকে সমৃদ্ধ করার সমার্থক বটে। আর এটাও ভুললে চলবে না যে, প্রকৃত গণতন্ত্র রয়েছে সমাজতন্ত্রে।