দীর্ঘদিন পর আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির মিত্ররা। সে লক্ষ্যে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতাও। ধারাবাহিকভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি ফেরাতেই এ প্রস্তুতি। এবার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়তেও কর্মসূচি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীসহ মহানগর ও জেলা পর্যায়ে কর্মিসভার পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় আবারও রাজনীতিতে ফিরতে যাচ্ছেন ড. রেজা কিবরিয়া। দলগুলোর বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির সমমনা দলগুলোর অনেক নেতা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কেউ কেউ নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে নতুন করে আবারও আশার আলো দেখছেন তারা। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আবার মাঠে নামতে চান তারা।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ৪ দিন আগে গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. রেজা কিবরিয়া। এরপর তাকে আর রাজনীতিতে দেখা যায়নি। দীর্ঘ ৪ মাস পর আবার দলে ফিরছেন তিনি। গণঅধিকার পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা পদে থেকে দলের হাল ধরবেন বলেও যুগান্তরকে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সমমনাদের নিয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নেবেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় ড. রেজা কিররিয়া যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি কখনো রাজনীতি ছাড়িনি। গণঅধিকার পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি আছি।’
এদিকে দলের নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে কর্মিসভার উদ্যোগ নিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। ১০ মে থেকে ৮ বিভাগে কর্মিসভায় অংশ নেবেন মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। ১০ মে রংপুর, ১১ মে রাজশাহী, ১৯ মে চট্টগ্রাম, ২৪ মে বরিশাল কর্মিসভা করার কথা রয়েছে। পরে এসব বিভাগে জনসমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এনিয়ে শনিবার রাতে বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চ। ভারতীয় পণ্য বর্জন ইস্যুতে আবারও মাঠে নামবে ১২ দলীয় জোট। চলতি মাসেই অন্তত ৩টি মহানগরে লিফলেট বিতরণ করবেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে জনমত তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে এ জোট। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও নতুন করে কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কি ধরনের কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়েও কয়েক দফা আলোচনা করেছেন জোটের শীর্ষ নেতারা। এছাড়া জোরালো ভাবে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে সভা-সেমিনার, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এছাড়া অন্য দলগুলোও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সাজাচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ১০ মে বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা শুরু হবে। প্রথমে রংপুরে, ১১ মে রাজশাহীতে। এরপরে আরও ৬টি বিভাগে ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিধি সভা হবে। দিনক্ষণ নির্ধারণ করা আছে। এসব সভা থেকে আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলব। বিভাগীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সম্পর্কটাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে কাজ করব। কার্যক্রম জোরদার করা। এছাড়া বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মধ্যদিয়ে প্রতিটা বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে জনসভা কিংবা সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দখলে মদদ দিয়েছে ভারত। সেই ইস্যুতে দেশের জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জন করছে। আমরা জনগণের পক্ষে রাজপথে আছি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের সপক্ষে ঢাকার বাইরে এপ্রিলে ২টি মহানগরে লিফলেট বিতরণ ও মিছিল করেছি। চলতি মাসে আরও ২ থেকে ৩টি মহানগরীতে লিফলেট বিতরণ করা হবে। উপজেলা নির্বাচন বর্জনের পক্ষেও জনমত তৈরির কাজ করছে ১২ দলীয় জোট।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮, ২০২৪ সালে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ভোটকেন্দ্রেও কেউ যাননি। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। কখনো কখনো আন্দোলনের মাত্রা কম-বেশি হয়। আমরা নতুন করে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছি। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপিসহ অন্য মিত্র দলগুলোর সঙ্গেও এ নিয়ে যোগাযোগ হচ্ছে।
গণঅধিকার পরিষদ একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং সম্পর্ক বজায় রাখছি। পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলকে গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। আগে ৫৬টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি ছিল। ওই সব জেলায় পর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য সম্মেলন ও আলাপের মধ্যদিয়ে কমিটি গঠন করছি। ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি। রোজার শেষ ১৫ দিনে খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা সফর করেছি। ঈদের পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জও গিয়েছি। পাশাপাশি ছাত্র ও যুব সংগঠনকে সক্রিয় করার জন্য কাজ করছি। অঙ্গসংগঠনগুলোকে উজ্জীবিত করার জন্য কাউন্সিল করার একটা সিদ্ধান্ত আছে আমাদের। যুব সংগঠনের কাউন্সিলর হবে জুনে। এই মাসের শেষদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের কাউন্সিল হবে।
তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাতে যেন ফাটল না ধরে সেদিকে জোর দিচ্ছি। আন্দোলন এক ব্যানারে হয়নি এটা ঠিক, তারপরেও ৪২টি রাজনৈতিক দল একই দাবিতে, একইদিনে, একই সময়ে কর্মসূচি পালন করেছে। আর যারা নির্বাচনে যায়নি কিন্তু যুগপৎ আন্দোলনেও ছিল না, তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। সামনে একটা বড় আন্দোলন গড়াই আমাদের লক্ষ্য।