পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া রোনালদো টাইব্রেকারে গোল করার পর পর্তুগাল কোচ মার্তিনেস বললেন, অধিনায়কের ওপর এখনও সবটুকু আস্থা আছে তার ও গোটা দলের।
এ কোন রোনালদো? প্রশ্নটা যেন গোটা ফুটবল বিশ্বের। পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি আগেও নানা সময়ে। কিন্তু তাৎক্ষণিক মাঠে এভাবে ভেঙে পড়তে তাকে কে দেখেছে কবে! ম্যাচের তখনও ১৫ মিনিট বাকি। অনেক কিছুই তো করার আছে তখনও। ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তা আর অদম্য মানসিকতার জন্য ক্যারিয়ারজুড়ে যার পরিচিতি, তাকে এভাবে দেখাটা তো বিস্ময়করই।
চেনা সেই মানসিকতার পরিচয় অবশ্য এ দিনই পরে দেখিয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। টাইব্রেকারে প্রথম শটই জালে জড়িয়ে বিশ্বাস ফিরিয়েছেন দলে। গোলকিপার দিয়োগো কস্তার অসাধারণ নৈপূন্যে স্লোভেনিয়াকে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে হারিয়ে পর্তুগাল উঠে গেছে ইউরোর কোয়ার্টার-ফাইনালে। ম্যাচের পর রোনালদোর প্রতি প্রবল আস্থা জানিয়েছেন কোচ রবের্তো মার্তিনেস।
টাইব্রেকারে কস্তা তিনটি শট ঠেকানোর পর চাপা পড়েছে অনেক কিছুই। তবু ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় সম্ভবত রোনালদোর কান্নাই। অতিরিক্ত সময়ে ওই ঘটনার পর অধিনায়ককে আলিঙ্গনে জড়িয়ে, পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দেন সতীর্থরা।
ম্যাচ শেষে রোনালদোর পাশে দাঁড়ালেন কোচও। পেনাল্টি কাজে লাগাতে না পারলেও টাইব্রেকারে প্রথম শট তাকে দিয়েই নেওয়াতে কোনো সংশয় ছিল না রবের্তো মার্তিনেসের মনে।
“সে আমাদের জন্য উদাহরণ। এই আবেগের প্রকাশগুলোও অসাধারণ। তার এসব (চারপাশের আলোচনা) পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই এবং সে যেমন আছে, সেজন্যই তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই, যেভাবে দলের পাশে থাকে সে…। আমি সবসময়ই নিশ্চিত ছিলাম, টাইব্রেকারে প্রথম শটটি তাকেই নিতে হবে এবং আমাদেরকে জয়ের পথ দেখাতে হবে…।”
পেনাল্টিতে সুযোগ হাতছাড়া করা, টুর্নামেন্টে এখনও গোল করতে না পারা, সব মিলিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে আছেন রোনালদো। তবে দলের ভেতর তাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই বলেই দাবি করলেন কোচ।
“আমার মনে হয়, আমাদের অধিনায়ককে নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত। সে যা করছে, গোটা ড্রেসিং রুমই তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আমার মতে, আমাদের সবাইকে দারুণ এক শিক্ষাও সে দিয়েছে যে, প্রতিটি দিনকেই প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে জীবনের শেষ দিনের মতো।”
“জীবন ও ফুটবলে কঠিন মুহূর্ত আসেই। কিন্তু সেই সময়টায় উঁচু মান ধরে রাখতে হবে এবং হার মানা যাবে না। এই ম্যাচে ওই ব্যর্থতার পর সে যেভাবে সাড়া দিয়েছে, সেটিই সত্যিকারের উদাহরণ যে, পর্তুগিজ ফুটবল নিয়ে আমরা কেন গর্বিত।”
স্লোভেনিয়ার বাধা কোনোরকমে পার হতে পারলেও পর্তুগালের সামনে এখন আরও অনেক বড় পরীক্ষা। কোয়ার্টার-ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সময়ও খুব বেশি নেই। আগামী শুক্রবারই এই ম্যাচ।
মার্তিনেস বললেন, এই সময়টুকুই যথেষ্ট তার দলের প্রস্তুত হয়ে উঠতে।
“আমাদের বিশ্রামের দিন দরকার নেই। আমরা এখানে থাকতে চাই এবং সবটুকু মনোযোগ এখন ফ্রান্সের দিকে… এই ইউরো খুবই উত্তেজনাপূর্ণ এবং পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে তিন দিন যথেষ্ট সময়।”
“ফ্রান্স খুবই শক্তিশালী দল এবং তারা কঠিন পরীক্ষা নেবে। তবে প্রতিপক্ষ ভালো বলেই সুযোগটাও বেশি।”