
চৌধুরী নজিব :
আমরা সবাই কম বেশি ‘মাদাম কুরি’ নামটি শোনেছি। তিনি ছিলেন বিংশতাব্দীর পৃথিবীর খ্যাতিমান প্রথম নারী বিজ্ঞানী। এই মহীয়সী নারী ১৮৬৭ সালে পোল্যান্ডের ওয়ারসো নগরীতে জন্মগ্রহন করেন। পোল্যান্ড ছিলো তখন রাশিয়ার অধিনে। ভাষাগত আর অর্থগত দিক থেকে পোলিশরা ছিলো নিষ্পেষিত জাতি। পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। তাঁর পিতা ছিলেন গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। মা ছিলেন একাধারে পিয়ানোবাদক, গায়িকা ও স্কুল টিচার। কুরির বাবা পোল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাঁর পৈতৃক
সম্পত্তি ধ্বংস হয়ে যায়, যার করণে মাদাম কুরি ও তাঁর ভাই বোনদের খুব অল্প বয়সেই জীবন সংগ্রাম দেখতে হয়। তাঁর পুরো নাম ‘মারী সাক্লোদাওস্কা’। বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরির সাথে পাণিগ্রহণের পর তাঁর নাম হয় মাদাম কুরি। বিজ্ঞানের এই ধ্রুবতারা হতে পারে যে কোন শিক্ষার্থীর জীবনের অনুুপ্ররণা। ‘মাদাম কুরি’ তেজস্ক্রিয় মৌল রেডিয়াম আবিস্কার করে বিশ্ববিখ্যাত হন। এবং তিনি মানব দেহের উপর রেডিয়ামের প্রভাব নিয়েও গবেষণা করেন। যে রেডিয়াম তিনি আবিস্কার করেছিলেন মূলত তার ক্ষতিকর প্রভাবই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।জীবন সংগ্রামের অন্য নাম হচ্ছে মাদাম কুরি।
মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন বিধায় কোন নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি, কারণ সে সময়ে পোল্যান্ডে মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ ছিলো। তাই তিনি গোপনে খুব কষ্টে ভ্রাম্যমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায়, এই বিশেষ বিশ্ববিদ্যায়টি শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিলো। তিনি অধ্যয়ন অবস্থায় ব্যবহারিক বৈজ্ঞানীক প্রশিক্ষন শুরু করেছিলেন। পরে ১৮৯১ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে বড় বোন ব্রোনস্লাভাকে অনুসরণ করে প্যারিসে পড়তে যান, সেখানে তিনি সরোবন বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি হন। তাঁর পক্ষে টিউশন ফি সহ বিশ্ববিদ্যারয়ের যাবতীয় খরচ সংকুলান করা
কঠিন হয়ে পড়ে, তাই তিনি একটি বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় কম দামে ব্যাচেলর রুম ভাঢ়া নেন। বিল্ডিংতে পানির সংযোগ ছিলনা বিধায় নিচ থেকে পানি তুলতে হতো তাঁকে।
পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি হোটেলে থালা বাসন ধোয়ার উপর চাকুরী করতেন, এতে তাঁর বিশ্ববিদ্যালযের খরচা কিছুটা মিটিয়ে যেত। এত কষ্টের মধ্যেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার কাজ চালিয় গেছেন। হাল ছাড়েননি কখনো। তখনকার সময়ে বিজ্ঞান চর্চায় তাঁর সামনে পুরুষশাসিত সমাজ নানান বাঁধার দেয়াল তুলেছিল, শত বাঁধা, প্রতিকুল পরিস্থিতি আর দারিদ্রতাকে জয় করে তিনি আজ
বিজ্ঞান জগতে কৃতিত্বের স¦াক্ষর রেখেগেছেন।মাদাম কুরি শুধু একজন নারী ব্যাক্তিত্বের নাম নয়। বিজ্ঞান জগতে যার অবদান বিচার করলে আইনস্টাইনের পরে এই বিজ্ঞানীর নাম আগে আসবে। মাদাম ছিলেন আইনস্টাইনের ঘনিষ্ট বন্ধু। তিনি শুধু মাদামকে বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতায় অবদানের জন্য শ্রদ্ধা করতেন না, বিচার শক্তি,নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রের দৃড়তার জন্যও সম্মান করতেন। তিনি হলেন প্রথম মহিলা যে বিজ্ঞানের ভিন্ন শাখায় দুবার নোবেল বিজয়ী হন। ১৯০৩ সালে তেজস্ক্রিয়তার উপর গসেষণার জন্য প্রথম বার পদার্থে এবং দ্বিতীয়বার ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল
বিজয়ী হন। তিনি ছিলেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যায়ে প্রথম মহিলা অধ্যাপক। বিজ্ঞান জগতের এই অতুলনীয় নারী যার কৃতিত্বের কথা ্এখানে লিখে শেষ করা যাবে না। তিনি শুধু আমাদের জীবনের অনুপ্ররণা নয় নারীকুলের গর্বও। ১৯৩৪ সনে মাত্র ৬৬ বছর বয়সে প্যারিসে এই মহীয়সী নারী তিনি মৃত্যু করণ।
শিক্ষার্থী ঃ জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ,
পোর্ট সিটি ্ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।