
নিউজ ডেস্কঃ
এলাকার খোলা মাঠে নিয়ে বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করা হয়েছে চালিয়ে অমানবিক নির্যাতন এই ঘটনায় একটি অবশেষে মামলাও হয়েছে। নির্যাতনের শিকার কক্সবাজারের চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। নির্যাতনে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ৩ জনকে আটকও করেছে চকরিয়া থানার পুলিশ।
মামলায় আসামি করা হয়েছে, ওই এলাকার মৃত মনির উল্লাহর ছেলে বদিউল আলম (৫৫), আনছুর আলম (৩৫), শাহ আলম (৫২), শাহ আলমের স্ত্রী আরজ খাতুন (৪৮), বদিউল আলমের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), আবদুল জাব্বারের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৩২), জয়নাল আবেদিন (৩০) এবং মনজুর আলমের ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৮)।এছাড়া এ ঘটনায় আটক হয়েছে তারা হলেন, মামলার প্রধান আসামি বদিউল আলমের ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২২), ৪ নম্বর আসামি আরজ খাতুনের মেয়ে জামাই বেলাল হোসেন (২৪) ও ৮ নম্বর আসামি মোহাম্মদ রুবেলের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ কায়সার (২০)। তারা নির্যাতনকারী আনছুর আলমের সহযোগিতাকারী হিসেবে তথ্য আসায় তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়।
মূল অভিযুক্ত ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আনছুর আলমসহ অন্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, বৃদ্ধ নুরুল আলমের লুঙ্গি ও গেঞ্জি টেনে ছিঁড়ে ফেলছে যুবলীগ নেতা আনছুর আলম। এ সময় তাকে থাপ্পড়ও মারেন নির্যাতনকারী। ভিডিও চিত্রটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সবার নজরে আসে।
তবে ঘটনাটি ঘটে গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ায়।এ নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম (৭২) চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার মৃত আলী মিয়ার ছেলে।এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন ৩১ মে রাতে ৮ জনকে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। কিন্তু ২ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ।
পরে ঘটনাটির ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি নথিভুক্ত করে অভিযানে নামে চকরিয়া থানার পুলিশ।এজাহারে বাদী আশরাফ হোসাইন দাবি করেছেন, গত ২৪ মে ঈদের কেনাকাটা শেষ করে বৃদ্ধ নুরুল আলম ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে ইজিবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আনছুর আলমের লালিত সন্ত্রাসীদল তাকে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে একটি খোলা মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে বৃদ্ধের লুঙ্গি ও গেঞ্জি টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে। এক পর্যায়ে তাকে উলঙ্গ করে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে তারা। এ সময় ওই বৃদ্ধকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে আনছুর আলম।
এ সময় দৃশ্যটি ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন যুবক মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন পরে সে ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আকারে ভাইরাল হয়।এজাহারে আরও দাবি করা হয়, ঘটনাটি আশপাশের লোকজন প্রত্যক্ষ করলেও সন্ত্রাসী আনছুর আলমের ভয়ে কেউ বৃদ্ধ নুরুল আলমকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। পরে খবর পেয়ে বৃদ্ধের ছোট ছেলে অটোরিকশা চালক সালাহ উদ্দিন স্বজনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান সেখানে বৃদ্ধকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।
বৃদ্ধ নুরুল আলমকে মারধর করার সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনসেট ও নগদ টাকা হামলাকারী আনছুর ছিনিয়ে নিয়েছে বলে এজাহারে দাবি করেন আশরাফ হোসাইন।আশরাফ বলেন, তার বাবাকে অমানবিকভাবে মারধর করেছে যুবলীগ নেতা নামধারী সন্ত্রাসী আনছুর আলম। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না এলাকায়।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে বৃদ্ধ নুরুল আলমকে এলাকার চিহ্নিত কিছু যুবক মারধর করেছে। বিষয়টি জানার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম আমি।বৃদ্ধকে মারধর করার ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কচির জানান, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অমানবিক ঘটনা।
ভিডিও চিত্রটি দেখার পরপরই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য পদসহ স্থায়ীভাবে বহিষ্কারে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল।তিনি আরো জানান, আনছুর আলম সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী। তার অপকর্ম সম্পর্কে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা আগে অবহিত ছিলেন না। ক্ষমতা পাওয়ার পর সে ডাকাতি, জমি জবরদখল ও চাঁদাবাজীসহ নানা অপর্কমে জড়িয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।