
আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
সরাইলের অরুয়াইল এলাকায় চেত্রা নদীর উপর ৭শত ফুট দৈর্ঘ্য বাঁশের সাঁকো। উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ৯ গ্রামের অন্তত ৬০ হাজার মানুষ পারাপার হয় এ সাঁকো দিয়ে।পারাপারে প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই টাকা করে নেওয়া হয়। এতে প্রতিদিন আয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আয়ের টাকায় বাঁশের এই সাঁকোর মেরামত কাজের পাশাপাশি রাণীদিয়া গ্রামের ২৫ পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।সাঁকোতে টোল হিসেবে টাকা আদায়কারী মোঃ সাহা মিয়া জানান, চেত্রা নদীর উপর সাঁকোটি বছরের ৭/৮ মাস থাকে। বর্ষাকালে এখানে পানি প্রবাহ বেশি থাকায় তখন সাঁকোটি উঠিয়ে নেয়া হয়।
প্রতিবার বাঁশের এ সাঁকো নির্মাণে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষ পারাপার হয়। জনপ্রতি আসা-যাওয়া দুই টাকা করে নেওয়া হয়।এই আয়ের টাকায় ২৫ পরিবার চলে। অরুয়াইল গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসিফ ইকবাল খোকন জানান, অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা মাদ্রাসাসহ জেলা শহরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া অন্তত হাজারো ছাত্র-ছাত্রী এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।তিনি আরো জানান, সাঁকোর দু’পাশ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে যাত্রী আনা-নেয়া করা হয়। এতে এলাকার শতাধিক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে এই চেত্রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হলে এখানকার জীবনযাত্রার মান আরো বদলে যেতো।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আমাদের ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ের রাণীদিয়া, কাকরিয়া, রাজাপুর ও বুনিয়াটেক এ চার গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ চেত্রা নদীর উপর বাঁশের তৈরী এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করে।তাছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার অরুয়াইল বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসে। এ হাটে মেঘনা নদীর ওপারের কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকার জাফরনগর, বুদনগর, শ্রীপুর ও খলা পাড়া এলাকার নানা শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ হাজারো মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়েই তারা অরুয়াইল বাজারে আসা-যাওয়া করেন।সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, খননের অভাবে চেত্রা নামক এ নদী এখন মরা। একসময় এ নদী দিয়ে সারাবছর নৌকা চলাচল করতো। অনুমান ২০ বছর আগে এলাকার মানুষের দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে রাণীদিয়া গ্রামের মোঃ মজর মিয়া নামক এক ব্যক্তি নিজের জমি বিক্রি করে সেইসময়ে লাখ টাকা খরচ করে চেত্রা নদীর উপর প্রথম বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। তিনি সাঁকো পারাপারে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০পয়সা করে নিতেন।
অনুমান ৯ বছর আগে মজর মিয়া মারা যাবার পর রাণীদিয়া গ্রামবাসী এক সভায় বসে গ্রামের দরিদ্র ২৫ পরিবারকে এ সাঁকোর আয়-দায় ও মেরামতসহ সকল দায়দায়িত্ব তাদের বুঝিয়ে দেন। সেই থেকে এ সাঁকোর আয় দিয়ে ২৫ পরিবার সুন্দরভাবে জীবন যাপন করে আসছে।পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, চেত্রা নদীর ওই সাঁকো দিয়ে পারাপার হন আমার ইউনিয়নের ফতেহপুর, পরমানন্দপুর, বড়ইছাড়া, হরিপুর ও ষাটবাড়িয়া এ পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সরকারী উদ্যোগে এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মিত হলে এলাকার হাজার হাজার মানুষের দুঃখ গাঁথা জীবনে সুখ শান্তি বিরাজ করতো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা জানান, হাজারো মানুষের দূর্ভোগ লাগবে অরুয়াইল এলাকার চেত্রা নদীর উপর সেতু নির্মাণে আগেই ডিও লেটার (আধা সরকারী পত্র) দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনাও করা হয়। এ নদীর উপর সেতু নির্মাণে ইতিমধ্যে সরকারী নানা উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।