
নিউজ ডেস্ক
শোন ভাই ,আমার মায়ের খেয়াল রাখিস মনে হয় আমি আর বাঁচবো না। যদি আমার কিছু হয়ে যায়, মায়ের দিকে খেয়াল রাখবি। আর তোর প্রতি আমার নির্দেশ, আমার এই ঘটনার জন্য যে দায়ী, সেই মাদ্রাসার শিক্ষক যেন কোনো ভাবেই ছাড় না পায়। সঠিক বিচার যেন তার হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবি’ ওই শিক্ষক আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে ওর বিচার যেন হয় এভাবেই ভাইয়ের কাছে মৃত্যুর আগে নুসরাত দাবি রেখে গেল হ্যা ফেনীতে দুর্বৃত্তদের আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেই ছাত্রী কথা গুলো তার নিজের ভাইকে
বলেছিলেন।যখন অবস্থা গুরুতর ছাত্রী নুসরাতের মাই কে বলেছিল আমি হয়তো আর বাঁচবো না মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস এবং তোর নিজের খেয়াল রাখিস যারা আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদের যেন সুষ্ঠু বিচার হয় আমার যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। আমার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। মানুষের শরীরে চামড়ায় ৭টি লেয়ার থাকে, ওই ছাত্রীর সব লেয়ার পুড়ে গেয়েছিল। শ্বাসনালিও পুড়ে গেয়েছিল।৮০ % পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়েই মেয়েটি বলে চলেছে, ‘আমি সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমার এই অন্যায়ের বিচার আমি চাই আমি সারা
পৃথিবীর মানুষের কাছে বলবো, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য, আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই এভাবে বলেছিল অগ্নি দগ্ধ নুসরাত এদিকে ঘটনাটির সূত্রপাত হয়েছিল গত ২৭ শে মার্চ ফেনী সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা পিয়নের মাধ্যমে চলমান আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ছাত্রী নুসরাতকে তার রুমে ডেকে নিয়ে। তাকে পরীক্ষার পূর্বে সরাসরি বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিল। বলে জানা যায় এতে ছাত্রী নুসরাত রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের রুমে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় জোরপূর্বক
যৌন নির্যাতন করেন। নুসরাতকে তবে রাফি’র মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। গত ২৭ মার্চ যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ- দৌলাকে আটক করে পুলিশ। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ কে আটক করার পর নুসরাতের পরিবারকে বারবার হুমকি দেয়া হচ্ছিল মামলা তুলে নেয়নি বলে গত শনিবার ফেনী সোনাগাজী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আরবী ১ম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে ভাইয়ের সাথে নুসরাত কেন্দ্রে যান। তার ভাইকে হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। হলরুমে প্রবেশপত্র ও ফাইল রাখার পর শম্পা নামে এক মেয়ে এসে তার
বান্ধবী নিশাতকে ৩য় তলার ছাদে মারধর করছে বলে জানায়। এরপর বান্ধবী নিশাতকে বাচাতে নুসরাত ছাদে ছুটে যান। তখন নুসরাত ছাদে উপস্থিত হওয়া মাত্র সেখানে অবস্থানরত ৪ জন বোরকা, নেকাব এবং হাতমোজা পরিহিত মেয়ে নুসরাতকে ঘিরে ধরে। তার বান্ধবীকে মারধরের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ন সাজানো ও মিথ্যা। নুসরাতকে কৌশলে ছাদে নেওয়ার জন্যই তারা এটি করেছিল। মেয়েগুলা নুসরাতকে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং এটি সাজানো ষড়যন্ত্র বলে জোরপূর্বক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেছিল। এতে নুসরাত
বলে আমি সব কিছু সত্য ঘটনা উল্লেখ্য করেছিলাম এবং ঐ মেয়ে গুলো নুসরাতকে বলে প্রিন্সিপাল কে অপমানের জন্য যে মামলা দিয়েছো সে মামলা প্রত্যাহার করে নিবে নুসরাত আমৃত্যু অটুট থাকার কথা জানালে। এতে তারা নুসরাতের উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।পরে মেয়ে ৪ জন মিলে ওর হাত-পা ওড়না দিয়ে বেধে ফ্লোরে ফেলে। একজন নুসরাতের বোরকায় পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং একজন আগুন ধরিয়ে দেয়। নুসরাতকে এভাবে ছাদে ফেলে রেখে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়।এদিকে নুসরাত আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর থেকে চিৎকার করতে তাখেন। এক পর্যায়ে হাত-পা পর্যন্ত আগুন পৌছলে
ওড়না পুড়ে গিয়ে বন্ধনটা খুলে যায়। তখন নুসরাত দৌড় দিয়ে নিচের সিড়ির দিকে যেতে থাকে। তখনো তার পুরো শরীরে আগুন জ্বলছিল। তার চিৎকার শুনে কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনষ্টেবল এবং মাদ্রাসার পিয়ন এসে তার শরীরের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।তারাও আগুনে পুড়ে আহত হয়ে যায়।পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ৫ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মৃত্যুবরণ করেন