
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেনী সোনাগাজী উপজেলার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় উক্ত থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের দায়িত্বে গাফলতির প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি মো. রুহুল আমীন। নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশের গাফলতি তদন্ত কমিটির প্রধান রুহুল আমীন বলেন- প্রাথমিকভাবে ওসি মোয়াজ্জেমের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। ওসিসহ আরো পুলিশের অন্য কর্মকর্তাদের গাফলতির বিষয়টি তদন্ত চলছে এবং তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নুসরাতের কাছ থেকে যৌন
হয়রানির অভিযোগ আমলে নিলে তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা এড়ানো যেতো। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সূচনা হতো না। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুইদিন ধরে নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশসহ স্থানীয় প্রসাশনের গাফলতি তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ডিআইজি বলেন- বিষয়টির তদন্ত শেষ হতে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে। এরই মধ্যে নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। আমাদের সাধারণনত একটি মামলা তদন্ত করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। এটি একটি বড় ঘটনা, তাই কিছুটা সময় লাগবে
এটাই স্বাভাবিক।তিনি আরো বলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনেক খারাপ রেকর্ড রয়েছে, যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানতো। যদি তার ব্যাপারে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে আর এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতো না। এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতির কিছু বিষয়ও জড়িত। একই দলের দুইজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের পক্ষে ও বিপক্ষে মানববন্ধন করেছে। এতে আদর্শচ্যুত ব্যক্তির যোগসাজশ রয়েছে এটা পুরাপুরি স্পষ্ট। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ডিআইজি মো. রুহুল আমীনের নেতৃত্বে একজন
পুলিশ সুপার, দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। এ দুই দিন তারা মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনা সম্পর্কে তাদের বিস্তারিত বক্তব্য নেন। একইসঙ্গে তারা নুসরাতের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদেরও বক্তব্য নেন। অন্য এক সূত্র জানাগেছে- চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার তিনদিন পর পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার প্রাথমিকভাবে পাওয়া বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা
দিয়েছেন। প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান কমিটিও নুসরাত হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের গাফলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে। তদন্ত শেষে এ কমিটিও আইজিপির কাছে প্রতিবেদন দেবে। এদিকে এর আগে গত ১২ এপ্রিল মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত দল স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তারা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন
কার্যকর ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা এড়ানো যেতো। এ ঘটনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। তারা মনে করেন এই নারকীয় হত্যযজ্ঞটি প্রশাসনের অবহেলার কারণে হয়েছে। প্রশাসন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নিরপেক্ষ না হলে দেশে এ ধরণের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে তাও উল্লেখ করেন।