
জসিম উদ্দিন,বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
ঈদ এলেই বেড়ে যায় লম্বা লাইন। ভারতে যেতেই হবে এমন সাহস আর ঝুঁকি নিয়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ভারতে যাচ্ছে হাজার হাজার পর্যটক। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে স্রোতের মত পাসপোর্ট যাত্রীরা। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বছরের অন্যদিন গুলোতে গড়ে প্রতিদিন ভারতে যায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার যাত্রী। পালাপর্বনে তা কখনো কখনো বেড়ে দাঁড়ায় ৯/১০ হাজারে। ঈদের লম্বা ছুটির কারনে ঈদেরদিন সহ আগে ও পরে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা পরিনত হয় জনসমুদ্রে। কে
কার আগে ভারতের মাটিতে পা রাখবে যাত্রীদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল প্রতিযোগিতা।বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনের একটি সুত্রে জানাগেছে ৯ই আগষ্ট থেকে ১৩ই আগষ্ট পর্যন্ত (ঈদের ব্যাতিত) চারদিনে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে প্রায় ৪৭ হাজার পার্সপোর্ট যাত্রী ভারতে গেছে। শুক্রবার যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তব্যরত ব্যাটালিয়ন পুলিশ , আনসার ও বেসরকারি সংস্থা পিমোর সদস্যরা। যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কিতে ভেঙ্গে পড়ে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রবেশের গ্লাস দরজা। পরে বেনাপোল পোর্টথানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি
সামাল দেয়।পুলিশের লাঠিচার্জে বেশকিছু যাত্রী এসময় শারিরিক ও মানষিক ভাবে লাি ত হয়। এমনিতেই ফেরি ঘাটে অসহনীয় যানজট। পরিবহনের সিডিউল ভেঙে পড়েছে এক সপ্তাহ আগে। নিয়মিত সকালে পৌঁছানো একাধিক পরিবহনের গাড়িগুলো বেনাপোলে আসছে দুপুরের পরে। সিডিউল মানছেনা ট্রেনও। সকাল পৌনে ৯ টায় বেনাপোল পৌঁছানোর কথা থাকলেও সকাল ১১টার আগে পৌঁছাতে পারছে না। কোন কোন দিন আরো দেরিতে বেনাপোলে ঢুকছে। ট্রেন দেরিতে আসার কারনে প্রায় একই সময়ে ইমিগ্রেশনে আসছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের
যাত্রীরা। সকালে বেনাপোলে পৌছালেও বেনাপোল পাড়ি দিতেই একজন যাত্রীর সময় লাগছে ২/৩ ঘন্টা।যাত্রীদের অভিযোগ, গত তিন মাস ধরে বাংলাদেশ ইমিগেশনের কাজ চলছে ধীর গতিতে। আগে প্রতি মিনিটে কমপক্ষে ২ জন যাত্রী ইমিগ্রেশন থেকে ছাড় নিতে পারতো। এখন সময় লাগে প্রায় তিন মিনিট। কেন সময় বেশি লাগছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কোন পুলিশ কর্মকর্তা দিতে পারেনি।তাদের স্পস্ট জবাব আমরা তো বসে নেই, আড্ডাও দিচ্ছি না। আগে যেভাবে হতো এখনো তেমনটি হচ্ছে। অবশ্য ইমিগ্রেশন পুলিশের কথা মানতে নারাজ সাধারন
যাত্রীরা। যাত্রী এবং চেকপোস্ট এলাকার দোকানদার এবং পরিবহন শ্রমিকরা জানান,তিনমাস আগে ঢাকা থেকে এসবি পুলিশ ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব বুঝে নেবার পর থেকে পুলিশের হাত শ্লো হয়ে গেছে। বিশেষ সুবিধা বন্ধ থাকায় দু,হাতের জায়গায় এখন একহাতে সিল মারার কাজ চলছে।এদিকে বর্ষা আর রোদ বৃস্টিতে ভিজে একাকার যাত্রী সাধারন।বেশি কস্ট পাচ্ছে বাচ্চা আর মহিলারা। ইমিগ্রেশন এলাকা ছেড়ে লাইন ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায়। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো ঢাকার তাঁতি বাজারে বাসিন্দা সুনিল দাস জানালেন, আগে
পরিবহনওয়ালারা সিল মারার জন্য টাকা নিয়ে আমাদের তাড়াতাড়ি পার করে দিত। এখন অসুস্থ্য বাবা মাকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২ ঘন্টা হয়ে গেল ভেতরেই ঢুকতে পারছি না। নোম্যান্সল্যান্ডের চিত্র আরো ভয়াবহ। পাঁচ শতাধিক যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায়। মাথার উপর খোলা আকাশ, ঝিরঝির বর্ষা। দৌড়ে আশ্রয় নেবার জায়গা নেই। মেয়েদের মাথার উপর ভ্যানিটি ব্যাগ আর ছেলেদের রুমাল আর দু’হাত। অর্ধেকটা শরীর ভিজে গেল বৃস্টিতে।এ অবস্থা বুধবার সকালের। যাত্রীদের এ অবস্থা
দেখে তাদের সাথে সহানুভুতি জানাচ্ছেন বেনাপোল কাস্টমসের সহকারি কমিশনার উত্তম চাকমা। তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃস্টিতে ভেজা যাত্রীদেরকে আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রবেশে সহযোগীতাও করছেন। নোম্যান্সল্যান্ডে যাত্রীদের বৃস্টিতে ভেজা নিয়ে তিনিও উদ্বিগ্ন। বিজিবি সদস্যারা প্যারেড গ্যালারিতে যাত্রীদের আশ্রয় নিতে সহযোগীতা করেন। তবে স্থানসংকুলানের কারনে সব যাত্রী এখানে আশ্রয় নিতে পারে না। রোদ বৃস্টি উপেক্ষা করে এভাবেই প্রতিদিন বেনাপোল দিয়ে হাজার হাজার পর্যটক ভারতে চিকিৎসা নিতে আর বেড়াতে যাচ্ছেন।