নিউজ ডেস্কঃ
গ্রামের বাড়িতে মেয়ের লাশ দাফন হবে না এজন্য এক অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের সাথে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেছিলেন মেয়ের বাবা মৃতদেহ দাফনের। চুক্তির টাকাও পরিশোধ করেছিলেন হতভাগ্য বাবা। কিন্তু সেই মৃতদেহ ওই অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার দাফন না করে ফেলে দিয়েছে মহিপুর সংলগ্ন তিস্তা নদীতে। ২ দিন পর সেই মৃতদেহ তিস্তার পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে আদিতমারী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরিচয় শনাক্ত হবার পর সেই হতভাগ্য বাবার কাছে পুনরায় লাশ দাফনের দায়িত্ব এসে কাঁধে চাপে। কিন্তু ঘটনা জানতে পেরে এবার পুলিশেই দায়িত্ব তুলে নেয় লাশ দাফনের জন্য।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে মৃত পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের হতভাগ্য বাবা গোলাম মোস্তফার কপালে। এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশ পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের (২২) মরদেহ গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করে। আজ ঈদের দিন সোমবার (২৫ মে) বিকেলে মরদেহের জানাজা শেষে মৌসুমী আক্তারের মরদেহ নিজ গ্রামে দাফন করে যৌথভাবে আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ।
মৃত পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তার লালমিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে। তিনি একই উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী। পুলিশ ও নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, জোংড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে ছয় মাস আগে বিয়ে হয়েছিল পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজিপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী আক্তার।
গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) অসুস্থতা অনুভব করলে একটি ট্রাকযোগে পাটগ্রামে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মৌসুমী।পথিমধ্যে রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছলে ট্রাকচালক তাকে মৃত দেখে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়। অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ মৌসুমীর মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন শুক্রবার খবর পেয়ে মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন।
মেয়ের মরদেহ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় মরদেহ দাফনের অনুমতি চান মৌসুমির বাবা। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই মরদেহ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে তার পরিবার ও মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা। মেয়েটির বাবা নিরুপায় হয়ে হতভাগ্য গরিব বাবা মেয়ের মরদেহ দাফন করতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ১ জন লাশবাহী গাড়ি চালকের সাথে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি করেন লাশ দাফনের জন্য।
কিন্তু চালক মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে গোলাম মোস্তফাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেয় ঘাতক চালক। কিন্তু ২ দিন পরে স্থানীয়দের খবরে গতকাল রবিবার (২৪ মে) রাতে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো অজ্ঞাত মরদেহটি উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ।আজ সোমবার (২৫ মে) ঈদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ মরদেহটির জানাজা শেষে আদিতমারী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিতেই খবর পেয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা। অবশেষে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আদিতমারী থানা পুলিশ পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় পাটগ্রামের নিজ গ্রামে বিকেলে মৌসুমীর দাফন করেন।
মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফার সাথে আদিতমারী থানা চত্বরে কথা হলে তিনি বলেন, হাতে পায়ে ধরতে চেয়েও লাশ গ্রামে নিতে দেয়নি আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে ১ জন ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি লাশ দাফন করতে চেয়েছিলাম। তারাও দাফন না করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন আমার মেয়ের লাশ।অবশেষে আবারও মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে হলো আদিতমারী থানায়। পুলিশের পাহারায় মেয়ের মরদেহ দাফনের জন্য বাড়ি যাচ্ছি।
মেয়ের মরদেহ নিয়ে যারা ব্যবসা করেছে তাদের বিচার দাবি করেন হতভাগ্য এই বাবা। এ বিষয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতের সেল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।আদিতমারী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও দুঃখজনক। সরকারি ব্যাগে মোড়ানো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হবার পর তার বাবার আকুতি জেনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ২ থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।