নিউজ ডেস্কঃ
কত শত যুগলের হাসি কান্নার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এখানে। মাত্র ক’দিন আগের সন্ধ্যায় ধুম পড়ে যেতো বাদ্য বাজনার। চোখ ধাঁধানো রঙিন আলো আর বাজনার সুর জানান দিতো উৎসবের। বরের হাত ধরে বিদায় নিতো কনে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিষ বাষ্প। বদলে দিয়েছে সব। করোনা ভাইরাসের ছোবলে পড়ে এখন শুধু বাঁচার আকুতি! মানুষের অনুরোধ একটু শ্বাস নিতে দেওয়ার।তাই করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে মানুষকে বাঁচাতে সী কম গ্রুপের বিলাসবহুল বিয়ের ক্লাব ‘সিটি হল কনভেনশন’ এখন পুরোদস্তুর আইসোলেশন সেন্টার। এখন যুগলবন্দি হতে কোন বর-কনে নয় বরঞ্চ করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসবেন বিলাস বহুল এই বিয়ের ক্লাবে।
তাই হয়তো এই আইসোলেশনের উদ্ধোধনী সময়ে দেখা গেল শোকের চিহ্ন। কালো ফিতা কেটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র (চসিক) এই আইসোলেশন সেন্টার উদ্ধোধন করেন তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ।সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের সিটি কনভেনশন হল ঘুরে দেখা যায়, বিয়ের ক্লাবটিতে চলছে আইসোলেশন সেন্টার তৈরির শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। বিয়ের স্টেজ, খাবারের টেবিল-চেয়ার তুলে ফেলে বসানো হয়েছে ২৫০ রোগীর শয্যা। সেই সাথে খাওয়ারের বাটি-পেয়ালা সরিয়ে বসেছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। প্লাস্টিক বোর্ডে ঢেকে ফেলা হয়েছে রঙ্গিন চিত্র কর্ম। অতিথির হাত ধোঁয়ার বেসিন প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা প্রতিরোধে।
চসিক সূত্র জানা যায়, করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য ৫২ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি প্রাথমিক তালিকা। করোনা ভাইরাস যোদ্ধাদের এই তালিকায় রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৬ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স, ১৪ জন ল্যাব টেকনেশিয়ান, প্যারামেডিক, ফার্মাসিস্ট, ১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও ৬ জন নমুনা বুথ কর্মী।চসিক সূত্র জানা যায়, নারী ও পুরুষ রোগীর পৃথক ২৫০ আইসোলশন বেডে প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্লাবটির ডাইনিং হলে ২১০ টি পুরুষ রোগীর বেড এবং দোতলায় ৪০টি বেড মহিলা রোগীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে।চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন জানিয়েছেন দুঃসময়ের এই যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারের কথা।
আইসোলশনে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক – স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকুরি প্রবিধান মালা বাস্তবায়নের আওতায় স্থায়ীকরণ করা হবে।অন্যদিকে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজোহা বলেন, সোমবার (১৫ জুন) থেকে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দু’একদিন বিলম্ব হতে পারে। কেননা, আগামীকাল রবিবার (১৪ জুন) থেকে এই আইসোলেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেবেন দায়িত্ব প্রাপ্ত ৫২ জন করোনা ভাইরাস যোদ্ধা। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পালন করবে একটি বিশেষজ্ঞ দল।
এর আগে গত এপ্রিলে করোনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে ক্লাবটিতে আইসোলেশন গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল সীকম গ্রুপ। পরে বৃস্হপতিবার (৪ জুন) আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের ৪০ হাজার বর্গ ফুটের এই বিলাসবহুল ক্লাবটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলার জন্য চসিকের হাতে তুলে দেয় শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানটি।সিটি হল কনভেনশন সেন্টারের মালিক, সী কম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওই সময়ে জানিয়েছিলেন, অবস্থান গত কারণে ওই এলাকায় একটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা খুব জরুরি। করোনার মহামারী সময়ে মানুষের পশে দাঁড়াতে পেরে কৃতজ্ঞ সীকম গ্রুপ।