
নিউজ ডেস্কঃ
হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম (মহাপরিচালক) পদ নিয়ে দু’পক্ষের লড়াই শেষ হতে না হতেই এবার চট্টগ্রামের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক পদে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী ও হেফাজতের সাবেক শীর্ষ নেতা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করেছে।সূত্র জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভায় অবস্থিত আল জামিয়াতুল আরবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। কিন্তু হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ নিয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় এতোদিন বিরোধটি শুপ্ত ছিল।
গত বুধবার (১৭ জুন) হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে আমৃত্যু পদায়ন করার পর এবার শাহ আহমদ শফীর পক্ষের লোকজন নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক পদে নিজেদের পছন্দের মাওলানা ছলিমুল্লাহকে বসানোর তৎপরতা শুরু করে দেন। ইতোমধ্যে শাহ আহমদ শফী এক ভিডিও বার্তায় মাওলানা ছলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহতামিম নিয়োগের ঘোষণা দেন। তবে তার এই ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৃহত্তর ফটিকছড়িবাসী ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক পদে শাহ আহমদ শফীর ঘোষিত মাওলানা ছলিমুল্লাহ’র বিরুদ্ধে এহসান এস সোসাইটি নামে একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানির মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তাদের দাবি, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করে অভিযুক্ত মাওলানা ছলিমুল্লাহকেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া আরবিয়া নছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ইউসুফ আনছারী বলেন, ‘১০৭ বছরের ঐহিত্যবাহী এ মাদ্রাসার মুহতামিম ইদ্রিস সদ্য প্রয়াত হলে মাদ্রাসার বিতর্কিত শিক্ষক ছলিমুল্লাহ কোনো নিয়মনীতির তোয়ক্কা না করে নিজেকে মুহতামিম দাবি করে জোরপূর্বক মাদ্রাসা পরিচালনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সে নিয়মানুযায়ী শুরা (নীতিনির্ধারণী) বৈঠক আয়োজনে বাধা এবং শুরা সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি প্রদান করছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ মাওলানার বিরুদ্ধে বর্তমানে অর্থ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা বিচারাধীন। ইতোপূর্বে তাকে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে মাদরাসার দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দিয়েছিল শুরা বোর্ড।’তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মপ্রাণ ফটিকছড়িবাসী ছলিমুল্লাহর মতো অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামি, প্রতারককে ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে কখনো মেনে নেবে না।’হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসার পর এবার আহম্মদ শফী ও তার ছেলে আনাস মাদানী নাজিরহাট মাদ্রাসায় নিজেদের পছন্দের লোক বসানোর তৎপরতা শুরু করেছে।
অথচ নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার পরিচালক শায়খুল হাদিস মোহাম্মদ ইদ্রিস সাহেব ইন্তেকাল করার পর মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।এ অবস্থায় শুরা পাশ কাটিয়ে আহমদ শফী সাহেব মাওলানা ছলিমুল্লাহকেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম (পরিচালক) হিসেবে নিয়োগ দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।’তবে আহমদ শফীর পক্ষাবলম্বনকারীরা বলছেন, মাওলানা আহমদ শফী নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এ দাবির বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামের সাবেক শীর্ষ নেতা ও ফটিকছড়ি বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফী নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ছলিমুল্লাহকে নাজিরহাট মাদ্রাসার পরিচালক নিয়োগ দেয়ার জন্য অবৈধ সব পন্থা অবলম্বন করে আসছেন। এতে এলাকাবাসী উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ। আমি বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে এখনও নিয়ন্ত্রণে রেখে শান্তি রক্ষার স্বার্থে সব প্রকার উস্কানিমূলক তৎপরতায় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছি। আমি বলে দিয়েছি, যা হবে, আইন ও শুরার মাধ্যমে হবে।