আল্পনা খাতুন, পড়াশোনা করছেন যশোর সরকারি এমএম কলেজে, মাস্টার্স প্রথম বর্ষে। শিলা খাতুন পড়ছেন অনার্স ৪র্থ বর্ষে, সম্পা খাতুন অনার্স প্রথম বর্ষে। আল্পনা, শিলা, সম্পার মতো কালীগঞ্জের ৫৫ মেয়ে শিক্ষার্থী শপথ নিয়েছেন- পড়শোনা শেষ না করে কেউ বিয়ে করবেন না। সমাজে তারা প্রতিষ্ঠিত হতে চান। পিছিয়ে পড়া এসব তরুণীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে সহযোগিতা করছেন হিরোকো কোবাইসি নামে জাপানের এক মহতি নারী। হিরোকো পেশায় একজন ফটোগ্রাফার ও ফ্লাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্টের শিক্ষক।
১৬ বছর ধরে এই নারী ঝিনাইদহ ও প গড় জেলায় মেয়েদের এ শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত রোববার কালীগঞ্জ ও প গড়ের বোদা উপজেলার ১১০ মেয়েকে শিক্ষাবৃত্তির টাকা তুলে দেওয়া হয়। হিরোকো নিয়মিত এসব মেয়ের খোঁজখবর রাখেন জাপানে বসেই। আবার মাঝে মাঝে তিনি বাংলাদেশে এসে এই মেয়েদের সঙ্গে দেখা করে যান। তার এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড। এবছর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ও রায়গ্রাম ইউনিয়নের কলেজ পড়ুয়া ৩৪ জন এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ২১ মেয়েকে এই শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প গড় জেলার বোড়া উপজেলায় আরো ৫৫ মেয়েকে এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
আর এই শিক্ষা বৃত্তির শর্ত-পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে বিয়ে না করা। ক্যাথি বিশ্বাস, বাড়ি নিয়ামতপুর ইউনিয়নের পূর্ববলরামপুর গ্রামে। পড়শোনা করছেন যশোর সরকারি এমএম কলেজের অর্নাস ২য় বর্ষে। অসহায় ও গরিব পরিবারের সদস্য হওয়ায় পড়াশোনার খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছিল তার বাবা-মা। কয়েক বছর ধরে তিনি এই শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন। এই বৃত্তির টাকা তার শিক্ষায় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। ওই গ্রামের আরেক শিক্ষার্থী দিপা সরকার। তিনি জানান, পড়াশোনার খরচ চালাতে তাদের বেশ কষ্ট কচ্ছিল।
বিষয়টি জানার পর হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড ওমেন স্কলারশিপে আবেদন করে তিনি বৃত্তি পাচ্ছেন। হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের এরিয়া কো অডিনেটর (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী জানান, ৮৫ বছর বয়সী হিরোকো কোবাইসি এক সময় খুব গরিব ছিলেন। তিনি অন্যের টাকায় পড়াশোনা শেষ করেন। সেই সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি কখনো তার সামর্থ হয় তাহলে গরিব মেধাবী মেয়েদের পাশে তিনি দাঁড়াবেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে এসে জানতে পারেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের এক মেয়ে রেজিস্ট্রেশন ফি না দিতে পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরপর তিনি সেই মেয়ের বাড়িতে যান। পরে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডকে জানান, প্রতি মাসে কালীগঞ্জের গরিব মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি দিবেন।
সেই থেকে প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি এই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, টাকার অঙ্ক খুব সামান্য; কিন্তু বৃত্তি দেবার উদ্দেশ্য-মেয়েরা যেন লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একজন স্কুল পর্যায়ের মেয়ে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা এবং কলেজ পর্যায়ে ৪০০ টাকা করে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। আর বৃত্তি প্রাপ্ত মেয়েরা ঠিকমত লেখাপড়া করছে কি না বা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কি না তা তদারকি করেন হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের স্টাফরা। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ হিরোকো বাংলাদেশে আসেন। সেই সময় “আমরা যদি আলো হই, তুমি আমাদের মোমবাতি” স্লোগানে বৃত্তিপ্রাপ্ত মেয়েরা তাকে সম্মাননা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে তিনি মেয়েদের হাতে প্রজ্জলিত মোমবাতি তুলে দেন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি;