অত্যচারী ও যৌতুকলোভী স্বামীর নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন আলহাজ্ব মাওলানা মনিরুদ্দীনের কন্যা স্কুল শিক্ষিকা বিবি জয়নাব তানজিনা। শনিবার (২১শে নভেম্বর) কাজীর দেউড়ির একটি হোটেলে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ভুক্তভোগীর পরিবার।সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিবি জয়নাব তানজিনা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুবই মর্মান্তিক। আমার বাবা একজন মসজিদের ইমাম। আমরা ৩ বোন, আমার কোন ভাই নেই।
এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আমার যৌতুকলোভী ও প্রতারক স্বামী মনিরুজ্জামান নয়ন নিজেকে এতিম ও অসহায় পরিচয় দিয়ে আমার বাবার কাছে আশ্রয় চাইলে তিনি তাকে আশ্রয় দেন। যেহেতু তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এতিম ও অসহায়কে সাহায্য করেন। একপর্যায়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় ২০১১ সালের ২৮শে জুলাই ইসলামি রীতিনীতি মতে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু কাবিননামায় ভুল তথ্য প্রদান করায় তার কোন আত্মীয় স্বজনের পরিচয় আমি পাইনি।বিয়ের পর সে আমাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে সে কারণে অকারণে আমার উপর রেগে যায়, কারণে অকারণে মারধর করতে শুরু করে।
প্রতি মাসে বাজার খরচ এবং বাসা ভাড়ার টাকাও আমার বাবা প্রদান করতো। ১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আমার বাবা আমাদের খরচ চালাতে অক্ষম হয়। এদিকে ২০১২ সালের ১৩ই নভেম্বর আমাদের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তখন ভাড়া বাসা ছেড়ে আবারো বাবার বাড়ীতে চলে আসলাম। কিন্তু এরপরেও আমার স্বামীর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সে প্রতিদিন চাকরীর নাম করে সকালে বের হয়ে রাতে বাসায় ফিরতো নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। যদিও তার বেতনের টাকা কখনো চোখেও দেখিনি।
টাকার অভাব সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি নিই। আমার স্বামী আমার বেতনের টাকা নিয়ে নেওয়ার জন্যও মারধর শুরু করে। আমাকে মারধরে আমার মা বাধা দিলে তাকেও মারধর করতো, এমনকি আমার শিশু কন্যাকেও সে মারতো।একদিন আমি তার পরকিয়ার সম্পর্কের কথা জেনে যাই। তার মোবাইলে একটি মেয়ের ছবি দেখে মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে সে আমাকে খুব বেশী মারধর করে। এরপরেও আমি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করি।
কয়েকদিন পর আমাকে সে বলে যে, ব্যবসা করতে তাকে ৫ লাখ টাকা জোগাড় করে দিতাম। আমি তাকে প্রশ্ন করি বাবার চাকরী নেই, এর উপর তিনি অসুস্থ এত টাকা কোথায় পাব? তাই টাকা দিতে পারবো না বলে জানিয়ে দিই। এরপরে সে বলে টাকা দিতে না পারলে ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে,তার কাছে অনেক টাকা।সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৭ই জানুয়ারি বাসায় বাবা-মা না থাকায় যৌতুকের দাবীকৃত ৫ লাখ টাকা নিয়ে তার সাথে আমার বাকবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে আমাকে পেটে লাথি মারলে আমি জোরে চিৎকার দিই। আমার চিৎকার শুনে আমার চাচা চাচীসহ আশ পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে নয়ন বিভিন্ন হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। আমি বাধ্য হয়ে যৌতুক আইনের ৩ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করি, মামলা নং ৬১/২০২০। মামলার পর জানতে পারি নয়নের বাবা-মা আছে, যদিও কাবিননামায় তাদেরকে মৃত বলা হয়েছে। সে আমাকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। আমি স্কুলে যাওয়া-আসার সময়ও বখাটেরা বিভিন্নভাবে হুমকী দিত। মোবাইলে এবং সন্ত্রাসী দিয়ে তার দেওয়া হুমকি ধমকী সহ্য করতে না পেরে ২০২০ সালের ৭ই জুন তাকে তালাক দিই।
এরপর সে আমার নামে সোস্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে, যারা আমাকে সাহায্য করে তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করে।গত ১১ই নভেম্বর তাকে কেইপিজেড গেট থেকে পতেঙ্গা থানা পুলিশ আটক করে আদালতে প্রেরণ করেন। তাকে আটকের পর থেকে তার সহযোগীরা আমাদেরকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমতাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করতেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশাসন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ আমি ও আমার পরিবারের প্রতি একটু সুদৃষ্টি দিন। অন্যথায় আমাকেও হয়তো চিরবিদায় নিতে হবে এই পৃথিবী থেকে।