
নাটোরের বড়াইগ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রত্না খাতুনের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের দোকান লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের বাগডোব বাজারে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সন্ধায় এ ঘটনা ঘটে।ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এ ঘটনায় থানায় মামলা দিলেও আমলে নিচ্ছে না পুলিশ। লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাগডোব বাজারের মেসার্স আতিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী আতিক শাহরিয়ার বিকাশ, রকেট, নগদ, মাইক্যাশ, ফ্লেক্সিলোড, পে-ওয়েল মাধ্যম বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ ও ভুসিমাল বিক্রেতা। মঙ্গলবার সন্ধায় দোকান খোলা রেখে মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যান তিনি। এই সুযোগে রত্না খাতুন তার স্বামী মিলন আকন্দ, ননদ মাজেদা বেগম, শাশুড়ি নুরজাহান বেগমসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী দোকানে ঢুকে ক্যাশে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেন।
একই সঙ্গে, দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে দোকানের সামনে ইট-বালি এনে দোকান বন্ধ করে দেয়। এসময় স্থানীয় কবির উদ্দিন ,কাউছার আলী ও রাশফুল ইসলাম তাদের নিবৃত্ত করতে এলে তারা কবিরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট নিয়ে আঘাত করেন এবং কাউছার ও রাশফুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।এ ঘটনায় রাতেই থানায় অভিযোগ করতে এলে পুলিশ স্থানীয় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যস্ত থাকায় পরের দিন আসার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে বুধবার আতিক রত্না খাতুন, তার স্বামী মিলন আকন্দ, ননদ মাজেদা বেগম,
শাশুড়ি নুরজাহান বেগমসহ অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগডোব বাজারের ৩৬১ দাগের ৯৫ শতাংশের কাত জনৈক ইদ্রিস আলীর ক্রয়কৃত ১৪.৫ শতক জমি থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে রাস্তাবাদ ১০ শতক জমি আতিক শাহরিয়ারের বাবা রমিজ উদ্দিন এবং চাচা কবির উদ্দিন ১৯৮৮ সালে ক্রয়সূত্রে ওই জমি কিনে ভোগদখল করে আসছেন।
পরবর্তীতে রত্নার শাশুড়ি নুরজাহান বেগম ৩৬১ দাগের ইদ্রিস আলীর ক্রয়কৃত ১৪.৫ শতক জমির কাত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে রাস্তা সংলগ্ন ২.৫ শতক জমি কেনেন ১৯৯৯ সালে। এই আড়াই শতাংশের বেশিরভাগ বাগডোব-তালশোর রাস্তা হিসেবে দীর্ঘ ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে এলাকার মানুষ ব্যবহার করে আসছেন।সম্প্রতি রত্না বেগম আতিকদের ভোগদখলকৃত জমি থেকে আড়াই শতাংশ দাবি করে আসছেন।
এনিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইনজীবীসহ গ্রাম প্রধানরা জানান, আতিকদের ভোগদলকৃত অংশ ঠিক আছে। কিন্তু রত্না বেগম তা অমান্য করে আতিককে দোকান বন্ধের হুমকি দেন। এনিয়ে গত মার্চ মাসের ৫ তারিখে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়। মঙ্গলবার আবার দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।ব্যবসায়ী আতিক শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আমার বৈধ সম্পত্তিতে ঘর করে ব্যবসা করছি। অথচ আওয়ামী লীগ নেত্রী রত্না অন্যায়ভাবে আমাকে হেনস্তা করছেন।
সর্বশেষ দোকান লুট করেছেন। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্থানীয় নেতা, পুলিশ সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না। আমার দোকান বন্ধ করে দিছে। এটা খুলতে গেলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ভদ্রলোক, দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ পছন্দ করি না। তাহলে কি আমরা বিচার পাব না?’বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমিন আলী বলেন, ‘আমি উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ রানা মান্নান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি। উকিলদের বর্ণনা মতে আতিকদের দখল ঠিক আছে।’বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দেখি কী করা যায়।’মামলা নিচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমি-সংক্রান্ত মামলা থানায় নেয়া যায় না।
তাহলে দোকান লুটেরটা কেন নিচ্ছেন না, এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘আমি অফিসার পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখছি কী করা যায়।’অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেত্রী রত্না খাতুন দাবি করেন, এটি তার জায়গা। আতিকেরা জোর করে তার জায়গা ভোগদখল করছেন।