
রিপন মারমা কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)
সেই চিৎমরম মাঠ আনা গোনা একি ভাবে আগের মতই আছে, গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে তেমনই, শুধু নেই নতুন বছরের আবাহনে আনন্দে উদ্বেল মানুষের ঢল, নেই উচ্ছ্বাস, নেই বৈশাখী রঙ।পহেলা বৈশাখ মানে মারমাদের সাংগ্রাই জলকেলি গান, কবিতা, নাচে বর্ষবরণ, রঙিন পোশাকে বৈশাখী সাজে হাজারো মানুষের সম্মিলন আর বর্ণিল শোভাযাত্রা। পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর কাছে সেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র।মঙ্গলবার বঙ্গাব্দ ১৪২৭ এর প্রথম সকালে কাপ্তাই চিৎমরম গিয়ে মিললো না কিছুই। মুখে মাস্ক পড়া হাতেগোনা কয়েকজনকে দেখা গেল সামনের সড়ক দিয়ে পথ চলছেন। এখন যে মহামারীর দিন! শুধু কাপ্তাই চিৎমরম এলাকা নয়, পহেলা বৈশাখে পুরো রাঙ্গামাটি জুড়ে থাকত উৎসবের রঙ, আনন্দে মাতোয়ারা হত পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম।
রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর, কাপ্তাই-টু- চট্রগ্রাম সড়কসহ যেসব জায়গায় বৈশাখের প্রথম দিনে আনন্দ আয়োজনে মানুষের ঢল নামতো, সব জায়গা এখন খাঁ খাঁ।করোনাভাইরাসের মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জনসমাগম এড়িয়ে সবাইকে থাকতে হবে ঘরে। বিপদ কমানোর এই একটাই পথ।সেজন্য সরকার এবার বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থেকে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে।উৎসবহীন এই নববর্ষে ঘরবন্দি মানুষের প্রত্যাশা, নতুন বছরে বিপদ কেটে যাক, অবরুদ্ধ দশা থেকে দ্রুত মুক্তি মিলুক, এমন দিন আর কখনও না আসুক।
পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগতম জানান এবার ছেদ পড়ায় মন খারাপ ব্যাবসায়ীরা তবে মানুষের মঙ্গলের দিকটিই ব্যাবসাীরা আগে মতন দেখতে চান।“নতুন বছরের আগমনী আমরা নিজেদের মধ্যেই ভাবলাম। নববর্ষের প্রার্থনা এটাই হোক- এ কঠিন সময় যেন আমরা দ্রুত পার করতে পারি। আমরা সকলেই মানসিকভাবে একে অপরের পাশে আছি ভেবে নিয়ে নতুন বছরকে ঘরে থেকেই বরণ করব।’’রাঙ্গামাটি প্রত্যোকটা সংলগ্ন এলাকার গিয়ে জানা যায় অন্য বছর পহেলা বৈশাখে তার সকাল হত কাপ্তাইয়ে চিৎমরম থেকে ভেসে আসা গানের সুরে।“কিন্তু এবার শুধু চিৎমরম কেন, কোথাও কোনো আয়োজন নেই। নতুন বছরের এমন সকাল কল্পনাও করা যায় না।…
এই কঠিন সময় আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব, সেটাই এখন প্রত্যাশা।”রাঙ্গামাটিতে বর্ষবিদায় ও বাংলা নতুন বছরকে বরণে তিন দিনের উৎসব হয়ে আসছিল এবারে করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।মঙ্গলবার সকালে চিৎমরমের গিয়ে দেখা যায় নির্জন সামাজিক দুরুক্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে নববর্ষ উদযাপন করা হয়।সাচিউ মারমা বলেন, আমি এবারে চিৎমরম নববর্ষের লটারি ড্র আয়োজন করা জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম সব কিছু গোছানো শেষ এমনকি নববর্ষের জন্য কাট ব্যানার তৈরি করা হয়েছে ভাগ্যের কি পরিহাস মহামারি করোনা সংক্রান্ত বেরে যাওয়ার কারনে দিন দিন মানুষের মৃত্যু বেরে চলেছে। যার কারনে সরকার লগডাউন করা ঘোষনা দিয়েছেন আমরা এ পরিস্থিতিতে মনো যাতনায় ভুগতে চাই না।
নানা বাধার মুখে অনেক কিছুইতো করতে পারি না। এবারে যে শক্তি, সেটি অদৃশ্য। তার বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ঘরে থাকা।”এবার না হলেও আগামীতে আবার মানুষের মেলা জমবে- নতুন বছরের শুরুতে এ প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, “একাত্তরে নানা সংকটের মধ্যে আমরা ছিলাম। তা কাটিয়ে উঠেছি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমাদের জিততে হবে। এ আঁধার কেটে যাবে।”একই সুর মিললো কাউখালী উপজেলা সন্তান রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কথায়।“এমন দিন আমরা কখনোই চাই না। দুর্যোগকালীন সময়ে এবার পহেলা বৈশাখের আয়োজন নেই। সরকারী নিয়ম-কানুনগুলো মানতে হবে, আর সেটা সবার স্বার্থেই।তবে এলাকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট করে যে যার গড়ে সীমাবদ্ধ করে আয়োজন করতে হবে।