
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী, জঙ্গিবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনার দায়ে হেফাজতে ইসলামসহ সকল উগ্রবাদী সংগঠনকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ এবং ইসলামী শিক্ষা ধারা একমুখী করার দাবীতে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এম.পি’র মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ২ মে রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় স্মারকলিপি প্রদান করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে বলা হয় ইসলাম শান্তির ধর্ম।
আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে থেকে পাক-ভারত উপ-মহাদেশে শান্তিপ্রিয় সূফীবাদী পীর-মাশায়েখগণের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রম প্রসারিত হয়। আলহামদুলিল্লাহ- এতদপ্রেক্ষিতে আমরা মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করি। ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকেই আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামক ইয়ামেনী ইয়াহুদি মোনাফেক কর্তৃক ইসলামে বিশৃংখলা সৃষ্টির পায়তারা শুরু হয়।
ফলশ্রুতিতে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ) শাহাদাৎ বরণ করেন এবং চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফতকালে শিয়া ও খারেজী নামে ইসলামে প্রথম ২টি ভ্রান্ত দলের উদ্ভব ঘটে। ইতিপূর্বে দয়াল নবীজি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, ইয়াহুদীগণ ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তম্মধ্যে ৭২ দলই হবে বিভ্রান্ত। একমাত্র আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ইসলামের সঠিক পথে আছে। এদেশে জামাতী, হেফাজতী, ক্বওমী, আহলে হাদীস (সালাফী) জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীগুলো সেই ভ্রান্ত ৭২ দলেরই প্রতিনিধিত্ব করে।
দয়াল নবীজী (দ:) আরও ভবিষ্যৎবাণী করে ছিলেন- আরবের নজদ বর্তমান রিয়াদ এলাকা থেকে ইসলাম ধর্ম বিনাশী ভূমিকম্প, ধর্মীয় ফিৎনার উদ্ভব ও শয়তানের শিং বের হবে। উক্ত ভবিষ্যৎবাণীর আলোকে আমরা দেখতে পাই, আজ থেকে প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে সেই নজদ (রিয়াদ) এলাকায় ভ্রান্ত ওয়াহাবী আক্বিদার জনক মোহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব নজদীর আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তার বিভিন্ন লিখনিতে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের প্রসার ঘটায়। বর্তমান জামাত, ক্বওমী, হেফাজতী, আহলে হাদীস (সালাফীগণ) ও সকল জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী সেই উগ্র মতবাদেরই ধারক বাহক। যা তাদের অতীত বর্তমান কর্মকান্ডে প্রমাণিত। সেই উগ্র-মতবাদ প্রচার প্রসারের লক্ষ্যেই ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্বওমীরা সেই উগ্রপন্থী মাদরাসারই অনুসারী।
বিগত প্রায় দেড় শতাব্দী যাবৎ পাক-ভারত উপ-মহাদেশে সরলমনা সুন্নী মুসলমানদের নিকট আল্লাহ, রাসুল (দ:), আওলিয়ায়ে কেরাম ও মুসলমানদের বিভিন্ন আকীদা ও আমল নিয়ে তারা বিভ্রান্তিকর লিখনী ও বক্তব্য প্রদান করে আসছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে প্রচন্ড রকম ধর্মীয় বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। জামাত-হেফাজতীদের উগ্রবাদী কর্মকা-ের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।বিগত ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক শাপলা চত্বরের তান্ডব জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল।
বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরীফে অগ্নি সংযোগ, বাসে অগ্নি সংযোগ সহ আশেপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকার গাছপালা নিধন, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যার সাথে ইসলামের দূরতমও কোন সম্পর্ক নাই। ইসলামের দৃষ্টিতে কারো জান-মাল-ইজ্জতে আঘাত করা হারাম। সরকারের সময় উপযোগী সাহসী পদক্ষেপের কারণে দেশ ও জাতি সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
গত ২৬ শে মার্চ’২১ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ও তার পরবর্তীতে একে কেন্দ্র করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বি-বাড়িয়া ও চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে- রাষ্ট্রীয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করে তাও ইসলাম সম্মত নয়। অথচ তারা “হেফাজতে ইসলাম” দাবীদার।২৬ শে মার্চ’২১ পরবর্তী কর্মসূচীতে তাদের দাবী- হেফাজতের ২০ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়। সেই রক্তের সাথে বেঈমানী করে ৩রা এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে রিসোর্টে যায় তাদের নেতা মামুনুল হক, কথিত চুক্তি ভিত্তিক বৌ নিয়ে।
মাইন্ড ফ্রেসের নামে জেনা ব্যাভিচারে লিপ্ত হন তিনি। অথচ ‘হেফাজত’ ইসলামী সংগঠন দাবী করলেও তারা এ ব্যাপারে ইসলাম সম্মত কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। উপরন্তু মাও. মামুনুল হকের বিরুদ্ধেও হেফাজতে ইসলাম কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাদের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী উল্টো সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা দাবী করে, ২৬ মার্চ তাদের কোন কর্মসূচী ছিল না এটা সুস্পষ্ট মোনাফিকী চরিত্র।
এতেই প্রতীয়মান হয়, তারা ইসলামের হেফাজত নয় বরং ইসলামের নামে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তাদের ক্ষমতা দখলই ছিল মূল লক্ষ্য। এই ক্বওমী ও জামাতীরাই এক সময় ঘোষণা করেছিলো- “আমরা হবো তালেবান- বাংলা হবে আফগান”। ইতোমধ্যে জাতির কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে- ‘সকল ক্বওমী জঙ্গি নাহলেও কিন্তু সব জঙ্গিই ক্বওমী জামাতি ও সালাফি থেকে সৃষ্ট’। এসব সংগঠনগুলো আজ জঙ্গি প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
তাই সরকারের এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্বওমী মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্টদের জাতিগঠনের মূল ধারায় একিভূত করতে হবে। স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, মানবিক বিয়ে বলতে ইসলামে কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই। বরং শরীয়ত সম্মত ‘ইসলামী বিয়ে’ই হলো একমাত্র বিয়ে। এর বাইরে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে মানেই হলো জেনা ব্যভিচার তথা হারাম।
তথা কথিত ইসলামী নেতা হয়ে এমন অনৈসলামিক কর্ম কান্ডের তীব্রনিন্দা ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পীর তরিক্বত আল্লামা অধ্যক্ষ আব্দুল করিম সিরাজনগরী এবং মহাসচিব পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর নির্দেশে নির্বাহী মহাসচিব হযরতুলহাজ্ব আল্লামা আ ন ম মাসউদ হোসাইন আল্ ক্বাদেরীর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য যথাক্রমে পীরে তরিক্বত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা সৈয়দ ফকির মুসলিম উদ্দিন আহমদ নুরী আল্ ক্বাদেরী, পীরে ত্বরিক্বত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আল্ ক্বাদেরী,
পীরে ত্বরিক্বত হযরতুলহাজ্ব আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ মো’তাসিম বিল্লাহ রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মুফতি কাজী আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আলহাজ্ব অধ্যাপক এম এ মোমেন, সাংগঠনিক সচিব আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মতিন, আহলে সুন্নাত আইনজীবী কাউন্সিল এর আহবায়ক অধ্যক্ষ ড. শাহ জালাল,
সিনিয়র অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সমাজ কল্যাণ সচিব মুহাম্মদ আবদুস সালাম সেলিম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নঈমী, আহলে সুন্নাত যুব পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর আহবায়ক শফিক আল্ মোজাদ্দেদী প্রমূখ।