
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট পুলিশ বক্স সংলগ্ন ট্রাফিক চেকপোস্টে এক সিএনজি চালকের সাথে ট্রাফিক সার্জেন্ট মুজাহিদ চৌধুরীর অমানবিক আচরণের কারণে উক্ত সিএনজি চালক স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৯শে এপ্রিল এই ঘটনা ঘটে।জানা যায়, টানা লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হতদরিদ্র সিএনজি চালকেরা অনাহারে/অর্ধাহারে দিনযাপন করতে থাকে।
ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কিছু কিছু সিএনজি চালক বিভিন্ন এলাকায় গাড়ী বের করে দু’মুঠো ডাল-ভাত জোগাড়ের চেষ্টা করে। কিন্তু অসহায় চালকদের এই চেষ্টাকে পন্ড করে তাদের জীবনকে আরো দূর্বিসহ করে তুলে কতিপয় অসাধু ও অমানবিক ট্রাফিক সার্জেন্ট।নিহতের পরিবার এবং সিএনজি চালক নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা যায়,
বহদ্দারহাট এলাকার হতদরিদ্র সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম মানিক নিজের এবং পরিবার-পরিজনদের ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বহদ্দারহাট-বলিরহাট এলাকায় সিএনজি চালিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত জোগাড়ের চেষ্টা করে। কিন্তু ট্রাফিক সার্জেন্ট মুজাহিদ চৌধুরীর নিষ্ঠুর আচরণে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমালেন তিনি। বহদ্দারহাট মোড়ে যাত্রী নামানোর সময় ২দিন যথাক্রমে ২৪ ও ২৭ এপ্রিল সার্জেন্টের নজরে পড়লে তার গাড়ী আটক করে টো করার হুমকি দেয়।
২দিনই তিনি ট্রাফিকের হাত -পা ধরে পরিবারে অসহায়ত্বের কথা বলে এবং তাদের চাহিত যথাক্রমে ২৫০০ ও ২০০০ টাকা প্রদান করে সিএনজি ছাড়িয়ে আনেন। এই ৪৫০০ টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তার অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ে।নিরুপায় হয়ে একদিন পর অর্থাৎ ২৯শে এপ্রিল আবারো তিনি সিএনজি নিয়ে বের হলে আবারো ট্রাফিকের নজরে পড়েন। এবার তার শেষ রক্ষা হয়নি।
কারণ তিনি সার্জেন্ট মোজাহিদ চৌধুরীর চাহিত ৩০০০/- প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টাকা প্রদান করতে না পারায় তার সিএনজি টো করে দেওয়া হয়। এসময় রফিকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার পরিস্থিতি হলে তিনি অঝোর কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে যান। অসহায় চালক রফিক হয়তো এত বড় ধাক্কা সামলাতে পারেনি তাই রাত ১১টার দিকে ব্রেন স্ট্রোক করলে তাকে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে লাশ বাসায় এনে পরদিন সকালে দাফন সম্পন্ন করা হয়।এই পরিস্থিতিতে চরম হতাশা নেমে আসে সিএনজি চালক রফিকের পরিবারে। তার ছেলে, পিতার মৃত্যুর জন্য সার্জেন্ট মুজাহিদ চৌধুরীকে দায়ী করে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানিয়ে বলেন, আমার বাবার মত আর কাউকে যেন পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে মরতে না হয় এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জানাযার পর এলাকাবাসী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কয়েকজন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ সার্জেন্ট মোজাহিদ চৌধুরী যেই নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা দেখিয়েছেন সেটি খুবই নিন্দনীয়। নিজের লিপ্সা চরিতার্থ করতে কতিপয় সার্জেন্ট এভাবে প্রতিনিয়ত চালকদেরকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা না হলে এরকম অসাধু ট্রাফিক সার্জেন্টরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
ঘটনার বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সার্জেন্ট মোজাহিদ চৌধুরি পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন মর্মে বলেন, মাত্র ২ দিনে ২৬ টি সিএনজি টো করার কারণে অবৈধ সিএনজির অসাধু লাইনম্যানরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঐ সিএনজি চালকের নিকট থেকে ৩০০০/- টাকা দাবীর কথাও অস্বীকার করেন তিনি।