
আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহর মতো শব্দ কখন কোনটি বলবেন? ব্যবহার মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। ইসলামে সুন্দর ব্যবহারকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি জীবনাচারের ক্ষেত্রে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার পরিপালন জরুরি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের যেভাবে ইসলামের আদর্শ শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। মানুষের সাথে চলা এবং কথা বলা শিখিয়ে গিয়েছেন তা সঠিকভাবে পালন করাই ইসলামের মুল শিক্ষা।ইসলামে শিষ্টাচারকে ঈমানের অংশ বলা হয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ধীরে ধীরে শিষ্টাচারপূর্ণ আচরণ কমে যাচ্ছে। মানুষ ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ ভুলে যাওয়ার ফলে সমাজের অবস্থা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। চলনে-বলনে অনেক নামাজী ও দ্বীনদার ব্যক্তিকেও ইসলামের পরিভাষার যথোপযুক্ত ব্যবহার সম্পর্কে উদাসীন দেখা যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।ইসলামি পরিভাষায় নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ আছে, যেগুলো শব্দ প্রত্যেক মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে অসচেতন। তেমন কয়েকটি শব্দ ও তার প্রয়োগ নিয়ে আলেচনা করা হলো।
আলহামদুলিল্লাহ : আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোনো সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি বলা হয়ে থাকে। যেমন ভাই আপনি কেমন আছেন? জবাবে বলা উচিত, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন অনেক লােক রয়েছেন যারা এই সুন্দর এবং সঠিক উত্তরটি দিকে পারেন না। বলে থাকেন আছি কোনো রকম, যেমন দোয়া করেছেন, এইতো এমনসব শব্দ। এই শব্দগুলাে শোনার পর মহান আল্লাহ অনেক নারাজ হয়ে থাকেন।
ইনশাআল্লাহ : ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতের হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোনো বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন- ইনশাআল্লাহ, আমি আগামীকাল আপনার কাজটি করে দেবো। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুমিনদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই আবার আলহামদুলিল্লাহর স্থলে ইনশাআল্লাহ বলে থাকেন। অবশ্যই এই বিষয়গুলাে খেয়ার রাখতে হবে।মাশাআল্লাহ : মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। যে কোনো সুন্দর এবং ভালো বিষয়ের ব্যাপারে এটি বলা হয়।
যেমন- মাশাআল্লাহ তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো। এমনসব শব্দের ব্যবহার আমরা এখন প্রায় ভুলেই গিয়েছি। অনেকেই আবার নিজের ভেতরে অহংকার দেখিয়ে এমন শব্দ উচ্চারণ করেন না।সুবহানাল্লাহ : সুবহানাল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন সুবহানাল্লাহ! আগুনে পুরো ঘর পুরে গেলেও ঘরের মানুষ যথাসময়ে বের হতে পেরেছেন ও অক্ষত আছেন। এমন কথাগুলো বলার কারণে মহান আল্লাহ অনেক খুশি হয়ে থাকেন।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এই প্রসঙ্গে বলেছেন, সুবহানাল্লাহ এবং আলহামদুল্লাহ বলার কারণে মহান আল্লাহ আসমান এবং জমিনের মাধ্যকার সমস্ত খালি জায়গা পুরণ করে দিয়ে থাকেন।নাউযুবিল্লাহ : নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় চাই। যে কোনো মন্দ ও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলা হয়। অথচ আমদের চার পাশে অনেক লোক রয়েছেন যারা হরহামেশায় এমন কিছু গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। তার জন্য সেইসমস্ত ব্যক্তিদের মনে বিন্দুমাত্র ভয় আসেনা।
আসতাগফিরুল্লাহ : আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাক্সিখত কোনো অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে এটি বলা হয়। সারাদিনে রাসূল (সাঃ) এই কথাটি সব থেকে বেশি বার পাঠ করতেন।ইন্নালিল্লাহ বা ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন : অর্থ নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় এ দোয়াটি পড়তে হয়। বিশেষ করে কোনো কিছু হারিয়ে গেলে এই দোয়াটি বেশি করে পাঠ করতে হয়।
আলহামদুলিল্লাহ ইনশাআল্লাহর মতো শব্দ কখন কোনটি বলবেন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ : অর্থ মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোনো ওয়াসওয়াসা বা দূরভিসন্ধিমূলক কোনো প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পড়া উচিত। যখন আমাদের হাই আসে তখন এই দোয়াটি পাঠ করতে হয়। আসসালামু আলাইকুম : কারো সঙ্গে দেখা হলে অন্য কিছু না বলে আস সালামু আলাইকুম বলতে হয়। এটা সুন্নত আমল। এর সওয়াবও অনেক বেশি। আগে সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত বলে হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে।