
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র কখনও স্কুলের শিক্ষক আবার কখনও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কর্মকর্তা পরিচয়ে নেওয়া হচ্ছে পিন নম্বর। আর সেই পিন নম্বর ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুু উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের কাছ থেকে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ও কিটস অ্যালাউন্সের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক। এ ঘটনায় থানায় জিডিও করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রতারণার শিকার হয়ে ১৪৫০ টাকা খুইয়েছেন শহরের শিশুকলি বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনহা খাতুন। তার অভিভাবক সাথি খাতুন জানান, জুলাই মাসে স্কুল থেকে তার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা এসেছে বলে জানানো হয়।
পরে তিনি এজেন্টের কাছে নগদ অ্যাকাউন্টের টাকা ওঠাতে গেলে ২৪ জুলাই তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। উপজেলার শিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিজের অভিভাবক নারগিস সুলতানা জানান, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে অপরিচিত নম্বর থেকে সম্প্রতি তার কাছে ফোন আসে। সে সময় তার কাছে তার মেয়ে, তার ও তার স্বামীর নাম জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তার মেয়ে উপবৃত্তির টাকা কম পেয়েছে বলে বাকি টাকা পেতে পিন নম্বর পরিবর্তনের কথা বলে ১৪৫০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারক চক্র।
আবু সাঈদ নামে ভালকী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, উপবৃত্তির পাশাপাশি সরকার শিক্ষার্থীদের কিটস অ্যালাউন্স বাবদ এক হাজার টাকা করে দিয়েছে। গত ২৬ জুন জনৈক প্রতারক অফিসিয়াল পরিচয় দিয়ে কৌশলে নগদ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর জেনে সেই টাকা তুলে নেয়। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি তিনি প্রথমে শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান। পরে তার পরামর্শে থানায় একটি জিডি করেছেন।
আসাদুজ্জামান আলম নামে এক প্রধান শিক্ষক জানান, সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকাও এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। নগদ অ্যাকাউন্টে এই উপবৃত্তির ব্যবস্থার পর থেকেই এই সমস্যা হচ্ছে। এর আগে তাদের শিক্ষার্থীরা শিওর ক্যাশ থেকে টাকা পেত। তখন এ সমস্যা হয়নি। নগদের অনলাইনে কোনো দুর্বলতার কারণেই এটি হচ্ছে বলে ধারণা এই প্রধান শিক্ষকের। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরকারি শিশুকলি বিদ্যানিকেতন, শিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভালকী, বাঁবচুয়া, তেলটুপিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ১৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র প্রতারক চক্রটি মূলত সহজসহল অভিভাবকদের টার্গেট করে তাদের কাছ থেকেই কৌশলে এসব অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তার গ্রামা লের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বেছে নিচ্ছে। নানা ছলচাতুরী ও কথার মারপ্যাঁচে পিন নম্বর নিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই প্রতারক চক্র। বিকাশ এজেন্ট, ভুক্তভোগী ও কয়েকজন অভিভাবকও এমন তথ্য জানিয়েছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।