
বাংলাদেশের পথে ১৬০ আফগান শিক্ষার্থী করোনা পরিস্থিতির কারণে নিজ দেশ আফগানিস্তানে গিয়ে আটকেপড়া চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ১৬০ আফগান শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাস ফেরার অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। দু’দিন কাবুল বিমানবন্দরের পাশে আটকে থাকার পর তারা বিশেষ বিমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পৌঁছেছেন। সেখান থেকে যে কোনো সময় তারা বিমানে বাংলাদেশে আসবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় জানিয়েছে, আফগান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ১৪ জন বাংলাদেশি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে একটি ভাড়া করা উড়োজাহাজে করে শিগগিরই দেশের পথে রওনা হবেন।চট্টগ্রাম নগরের এম এম আলী আহমেদ রোডে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি কামাল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের আটকে থাকা আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা যারা এখানে আসতে চাচ্ছেন তারা এখন কাবুল বিমানবন্দর থেকে কাতারে পৌঁছেছেন।সেখান থেকে যে কোনো একটি ফ্লাইটে তারা বাংলাদেশে আসবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তারা স্বাভাবিক নিয়মে তারা আবার চট্টগ্রামের এই ক্যাম্পাসে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মাসে কট্টরপন্থি তালেবানরা দেশটির ক্ষমতা দখল করলে এসব শিক্ষার্থীর আর ক্যাম্পাসে আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।যে কারণে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের একটি সংস্থার সহযোগিতায় একটি বিশেষ বিমানে কাবুল ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেয়। শিক্ষার্থী দেশ ছাড়লে নিজেদের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, এই আশঙ্কায় তাদেরকে বিমানবন্দরে ঢুকার অনুমতি দেয় না তালেবানরা। যে কারণে প্রায় ৪৮ ঘন্টা তারা বিমানবন্দরের পাশের একটি জায়গায় আটকে থাকেন।শেষ পর্যন্ত তাজিকিস্তানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুরোধে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
তালেবান আসার পর থেকে কাবুলের নিরাপত্তা অনেক জোরদার করা হয়েছে। তবে, সবার ভেতর একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। তবে, ব্যাংক-বিমা বন্ধের প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে না পারা এবং রেমিট্যান্স বন্ধ থাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, আটার দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এতে জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, মানুষ অনেক ভয়ে আছে। কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসছেন না।
এরই মধ্যে, অনেক এলাকায় লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, দেশটির চলমান অস্থিরতা দ্রুতই শেষ হবে। আবারও স্বাভাবিক হবে ব্যবসা-বাণিজ্য।এরই মধ্যে তালেবানদের সরকার গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোমবার (২৩ আগস্ট) ইরানের সংবাদমাধ্যম পার্সটুডেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গোষ্ঠী রাজনৈতিক মুখপাত্র সোহাইল শাহিন।সোহাইল শাহিন জানান, তারা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক চান এবং দেশের সব নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সরকার গঠন করবেন। তালেবান সরকারে শুধু মাত্র পাশতুনদের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসলামি সরকার কোনো নৃগোষ্ঠীর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হবে না।
আপনি জানেন যে, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশসহ আরো কয়েকটি প্রদেশে তাজিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, ফারিয়া ও সারে পোলের মতো প্রদেশগুলোতে রয়েছে উজবেক জনগোষ্ঠী। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে পাশতুন জনগোষ্ঠী। এরা সবাই আফগানিস্তানের জনগণ এবং তারা ইসলামি সরকারের অংশ হবে।’সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, ‘তালেবানের নেতৃত্ব একটি অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যাতে আফগান সরকারে সবার অংশগ্রহণ থাকে। সরকারে এবং দেশ পুনর্গঠনে সব নৃগোষ্ঠীর অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশের পথে ১৬০ আফগান শিক্ষার্থী সবাই যাতে দেশের জনগণের সেবা করতে পারে সে জন্য অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন করা হবে।’ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী (আইএস) সম্পর্কে তালেবানের এ মুখপাত্র বলেন, ‘আফগানিস্তানের এটি একটি বিদেশি চক্র, দেশের মাটিতে কোথাও এদের ঠাঁই হবে না।’ সোহাইল শাহিন জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছে তালেবান।