
বন্ধ ঘরে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় ২৫০০ আসামি বন্ধ ঘরে মৃত্যু অনুমোদনের অপেক্ষায় ২৫০০ মানুষ! আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে আসামিকে কারাগারের যে কক্ষে রাখা হয় তাকে বলা হয় কনডেম সেল। ৮ ফিট বাই ৮ ফিট ঘরে নেই কোনো জানালা, প্রস্রাব-পায়খানার ব্যবস্থা সেই ঘরেই।বিচারিক আদালতের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ, দণ্ড কার্যকর করতে আনুমানিক ১২-১৪ বছর লাগে। ততদিন পর্যন্ত একজন আসামিকে এ কক্ষেই রাখা হয়।কনডেম সেলের আসামিরা পরিবারের সঙ্গে মাসে দুইবার টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পান।
সারাদেশের কারাগারে বর্তমানে মৃত্যুর প্রহর গোনা আসামির সংখ্যা ২৫০০শ’র মত। সাম্প্রতিক সময়ে ১৫ থেকে ২০ বছর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের অপেক্ষায় এ সেলে থাকার পর খালাস পেয়েছেন। এরপরই মূলত প্রশ্ন উঠেছে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই বছরের পর বছর কনডেম সেলে রাখা না রাখা নিয়ে।তিন জন আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে একটি মামলা করছেন। তারা চান না আর কনডেম সেলে থাকতে। তারা কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের এ কক্ষে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। রোববার যার শুনানিও হয়েছে।
তিন আসামির আইনজীবীর দাবি- যেহেতু মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, সে কারণে আগেভাগেই কনডেম সেলে রাখা ঠিক হবে না। আপিল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার পরই এ সেলে রাখা যেতে পারে। এর আগ পর্যন্ত তাদের জন্য কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় অন্য আসামিদের সঙ্গে রাখতে হবে।রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির বলেন, একটি মৃত্যুদণ্ডের মামলার শুনানি করতে সময় লাগে হাইকোর্টে ছয় বছর আর আপিলে লাগে ছয় থেকে ১০ বছর। এভারেজে ১০, ১২, ১৪ এমনকি ১৮ বছরও।
এমনও দেখা গেছে আপিল বিভাগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে অনেককে। তারা প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে কনডেম সেলে ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, তারা ফিরে এসে বাস্তব জীবনে আর কেউকে খুঁজে পান না। পরিবারের আর কোনো মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ থাকে না। তাদের পরিবার ভেঙে যায়। আমরা এখানে প্রশ্ন তুলেছি প্রাথমিকভাবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলেই তাকে ডেথ সেলে নেওয়া যাবে কি। নাকি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হতে হবে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে একজন ব্যক্তিকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার অর্থ কি দাড়ায়।
পরবর্তীতে তিনি যদি খালাস পান তাহলে কি তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব জীবন থেকে এই প্রশ্নটি উঠেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। আমাদের দেশে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স শুনানি করতে মোটামুটি ছয় বছর সময় লাগে। এখন আমরা শুনানি করছি ২০১৫ এবং ১৬ সালের ডেথ রেফারেন্সের। তাহলে ২০২১ সালের ডেথ রেফারেন্স ফাইল হচ্ছে এটির শুনানি হবে কবে। নিশ্চয় ২৬ বা ২৭ সাল এর আগে নয়।
এ ক্ষেত্রে তারা কি ডেথ সেলে থাকবেন? না তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যবস্থায় আনতে হবে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেম সেলে নেয়ার আগে সাধারণ বন্দিদের মত আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে ফাঁসির সাজা বহাল হলেই কেবল নেওয়া হয় মৃত্যু সেলে। সে নজিরই তুলে ধরা হয়েছে ঊচ্চ আদালতে।ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটা আদেশ দিয়েছে মৃত্যুসেলে নেওয়া যাবে তখন, যখন আপিল খারিজ হয়ে যাবে এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমাও খারিজ হয়ে যাবে তখন তাদের এখানে নেওয়া যাবে।