চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ‘ভারী গাড়ি চলায়’ চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের একটি র্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেওয়ায় একটি অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হালকা যানবাহনের জন্য নির্মিত র্যাম্পে ভারী গাড়ি চলাচল করায় পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরনগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার এ ফ্লাইওভার চালু হয়েছিল ২০১৩ সালের অক্টোবরে। পরে ২০১৭ সালে ফ্লাইওভার থেকে কালুরঘাটমুথী একটি র্যাম্প যুক্ত করা হয়।
সোমবার রাতে ওই র্যাম্পের সংযোগকারী অংশের একটি পিলারের উপরের দিকে ফাটল নজরে আসে বলে জানান চান্দগাঁও থানার ওসি মঈনুর রহমান।
গনধম্যাকে বলেন, “ফাটলের খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকেই ওই অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। নিচের দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি বিবেচনায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিডিএ, সিটি করপোরেশন এবং ম্যাক্সকে (ঠিকাদার) জানিয়ে দিয়েছি। এখন উনাদের কাজ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ফ্লাইওভারটিতে লুপ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা না মেনে লুপ ছাড়াই সেটি চালু করা হয় ২০১৩ সালে। এর প্রায় চার বছর পর র্যাম্পটি নির্মাণ করা হয় হালকা যানবাহনের জন্য। তাতে ভারী গাড়ি চলাচলের কারণে এখন ফাটল ধরার কথা বললেও এর দায় নিতে রাজি নয় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কিংবা রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
ভারী যান চলাচল, কেন?
ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইওভারের এ অংশটি (র্যাম্পটি) ডিজাইন করা হয়েছিল হালকা যানবাহনের জন্য। উদ্বোধনের সময় হাইট ব্যারিয়ার (প্রতিবন্ধকতা) ও সাইনবোর্ড ছিল।
“কিন্তু সিটি করপোরেশনের কাছে যখন হস্তান্তর করা হয়, তখন নিচের রাস্তায় ওয়াসার কাজ চলছিল। তখন ব্যারিয়ার ভেঙে ফেলেছে। এরপর বিলেটবাহী গাড়ি, কভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করে।”২০১৭ সালের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের ওই র্যাম্পটি চালু করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষণের ভার সিসিসিকে দেয় সিডিএ।
মাহফুজুর রহমান বলেন, “কলামের উপরে ক্যান্টিলিভার (মূল কাঠামোর সাথে সংযোগ করা অংশ) করে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সাথে র্যাম্পটি করা হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল করায় পিলারের উপরের অংশে ফাটল তৈরি হয়েছে। তবে এটা মেরামত করা যাবে।“এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ যেহেতু সিটি করপোরেশন করে, তাদের সাথে যোগাযোগ করে মেরামত করা হবে। অতি দ্রুত যান চলাচলের জন্য র্যাম্পটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।”
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই র্যাম্প নির্মাণকারী ঠিকাদার কোম্পানি ম্যাক্স গ্রুপের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।“উনাদের যে ভাষ্য, মূল ডিজাইনে এই র্যাম্পটি ছিল না। পরে সংযুক্ত করেছে। যেহেতু এটা হালকা যানবাহনের জন্যই করা, তাই হাইট ব্যারিয়ার দেওয়া যেত। অতিরিক্ত ভারী গাড়ি চলাচল করায় এ অবস্থা হয়েছে।
প্রতিকার করা যাবে। উনারা যেহেতু কাজ করেছেন, তাদের মাধ্যমেই করতে হবে। মেরামত করা সম্ভব।”এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, “এখন একটা হাইট ব্যারিয়ার বসিয়ে দেব। যাতে ভারী গাড়ি উপরে উঠতে না পারে। এজন্য সিডিএকে চিঠি দেব। যেহেতু মূল প্রজেক্ট উনারা করেছেন। উনাদের একটা সাজেশন তো লাগবে। মূল ডিজাইনের ভিত্তিতে একটা সাজেশন দেবেন উনারা। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করব।”
প্রস্তাবে লুপ ছিল, হয়েছে র্যাম্প
এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। সিডিএ ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করে। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেন।সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ফ্লাইওভারটির কালুরঘাটমুখী একটি লুপ (ফ্লাইওভারের সাথে অন্য সড়কের সংযোগকারী) নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
পরে একটি একমুখী র্যাম্পের (গাড়ি ওঠানামার রাস্তা) প্রস্তাব করা হয়।তবে প্রথম পর্যায়ে লুপ ও র্যাম্প কোনোটি ছাড়াই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়।চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন,
ওই ফ্লাইওভারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় লুপ করার বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও সভায় কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে আর তাদের সম্পৃক্ত রাখা হয়নি। “এই রকম র্যাম্প ডিজাইনে ছিল না। মূল ডিজাইন মেনে এটা করা হয়নি। এখানে ডানমুখী আরেকটি লুপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এখন শুধুমাত্র একটি র্যাম্প ধরে যদি উভমুখী যানবাহন চলাচল করে তাহলে লোড ট্রান্সফারের (ওজন স্থানান্তর) কারণেও ফাটল হয়ে থাকতে পারে।”
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ‘ভারী গাড়ি চলায়’ অধ্যাপক ইমাম বলেন, “সিডিএ কীভাবে এটা করেছে জানি না। এখনকার ফাটল বড় কিছু নয়। তবে ডিজাইন পরিবর্তন না করে যদি এ কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে ফাটল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”এই র্যাম্প আর লুপ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই অন্য আরেক তথ্য দেন সিডিএর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন,“র্যাম্পটা কিন্তু সিডিএর অর্থায়নে করা হয়নি। এটা একটা ডোনেশন ক্রিয়েট করে তখনকার চেয়ারম্যান মহোদয় করেন। এটা সরকারি অর্থায়নে করা হয়নি। র্যাম্পটা সরকারি কোনো প্রকল্পও না। সিডিএ এই কাজে কোনো টেন্ডার, ডিপিপি বা অর্থায়ন করেনি।”২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের প্রায় তিন বছর পর স্থানীয়দের দাবির মুখে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী ওই র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ।