আমি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত জল করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাই। স্বামী প্রতারণা আর আইনের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। রোববার দুপুরে শান্তা আক্তার নামের এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা মানিকগঞ্জে শহরের শহীদ রফিক সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে গলায় প্লেকার্ড ঝুলিয়ে আর এক হাতে পার্সপোর্ট নিয়ে নায্য বিচারের দাবিতে অবস্থান করছিলেন।
শান্তা আক্তার জেলার সিংগাইর উপজেলার গেড়াদিয়া গ্রামের বাহারউদ্দিনের মেয়ে। তারা চার বোন দারিদ্র্যের কষাঘাতের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা শান্তা সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ২০০৪ সালে গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে যান।
২০১৭ সালে তার বিয়ে হয় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গুজুরির চরের কাতারপ্রবাসী নবীন হোসেনের সঙ্গে। এর এক মাস পরই ফের বাহরাইন চলে যান শান্তা। সেখানে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন, নানা জটিলতায় কাতার থেকে দেশে ফিরেছেন স্বামী নবীন। কোনো কাজও পাচ্ছেন না।
শান্তার জানান, স্বামীর কথা অনুযায়ী ব্যবসার জন্য তাকে কয়েক দফায় ১৬ লাখ টাকা পাঠান। ২০২১ সালে জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা পান তিনি। শান্তা জানতে পারেন তার আপন ভাগনিকে (১৫) নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন নবীন। অবশ্য এর আগে এক তরফা ভাবে শান্তাকে তালাক দেন। সংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে আসেন শান্তা। এ ঘটনায় দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা দাবি জানিয়ে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ওই নারী।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল আদালত নবীনকে চার কিস্তিতে ৬ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। প্রথম কিস্তিতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিলেও আর কোনো টাকা দেননি নবীন। এ বিষয়ে শান্তা পারিবারিক আদালতে পুনরায় অভিযোগ করেন। আদালত নবীনকে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। ফলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
এদিকে ১৬ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে চলতি বছরের ১০ মার্চ সিংগাইর থানায় আরেকটি মামলা করেন শান্তার মা রাবেয়া খাতুন। এতে নবীন ও তার মা-বাবাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। থানার এসআই বেলাল হোসেন তদন্ত সম্পন্ন করে গত ২৪ মার্চ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামিদের অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন। অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিলেও নবীন জামিন নেননি। আগামী ২১ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে বলে জানালেন শান্তা।
এসব বিষয়ে জানতে শান্তার স্বামী নবীনের মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে স্বামীর কাছে প্রতারিত শান্তা আক্তার বাহরাইনের বাংলাদেশ দূতাবাসে আইনি সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবরে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন।
শান্তা আক্তার বলেন, ‘আমি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত জল করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাই। আইনের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।’